
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ — আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর রাজনৈতিক প্রভাব দূর করে বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক বৈঠকে এই দাবি ওঠে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনের পরপরই।
বৈঠকে পুলিশের পক্ষে দাবি তুলে ধরেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ আল আসাদ। তিনি বলেন, “পুলিশ প্রায়শই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে কাজ করতে বাধ্য হয়। গত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় পুলিশের এই ব্যবহার গণতন্ত্র ও পেশাদারিত্বে আঘাত হেনেছে।”
তিনি একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, “এটা বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বাহিনী আরও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে এবং বাহিনীর মধ্যে পেশাদার নৈতিকতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
পুলিশ কনস্টেবল সামিয়া স্বর্ণা পুলিশ সদস্যদের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা দাবি করেন। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তাদের দাবি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার আশ্বাস দেন এবং শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ সপ্তাহের উদ্দেশ্য হলো নীতিনির্ধারকদের সাথে তৃণমূল পর্যায়ের সংযোগ স্থাপন এবং বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে আধুনিকায়ন করা।” তিনি আরও বলেন, “জনগণের আস্থা ফেরাতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিকল্প নেই।”
তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তবে যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আইজিপি প্রধান উপদেষ্টাকে ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি, অপ্রয়োজনীয় ক্রয় স্থগিত এবং পুলিশ সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ঋণ চালুর মতো সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
কর্মশালা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
রাজারবাগে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একাধিক কর্মশালায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনী নিরাপত্তা ও বাহিনীর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) একটি প্রেজেন্টেশনে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচটি প্রধান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে:
১. পরাজিত শক্তির উসকানি ও অপপ্রচার: রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানো ও শান্তি বিনষ্টে উসকানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
২. নির্বাচনে নিরপেক্ষতা: মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কোনো চাপ বা প্রভাব ছাড়াই আইনের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৩. অস্ত্র ও সহিংসতা: অবৈধ অস্ত্র ও লুণ্ঠিত অস্ত্রের ঝুঁকি এবং রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ আসে।
৪. সন্ত্রাস ও সীমান্ত অস্থিতিশীলতা: চরমপন্থা, রোহিঙ্গা সংকট এবং সীমান্ত অশান্তি আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
৫. ভুল তথ্য ও গুজব: বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের মোকাবিলা করে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, ‘পুলিশ খারাপ না’ — এই বার্তাকে জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে ইতিবাচক মনোভাব, জনবান্ধব আচরণ এবং আধুনিক পুলিশিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।