
ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি আত্মহত্যা করেননি, তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত টাস্কফোর্স। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, দুইজন ব্যক্তি এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণে অস্পষ্টতা থাকায় খুনিদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
টাস্কফোর্স জানায়, হত্যার সময় বাসায় কেউ জোরপূর্বক প্রবেশ করেনি এবং ভিতরে আগে থেকেও কেউ ছিল না। রান্নাঘরের ছুরি ও বটি দিয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয় তাদের। নিহতদের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং ক্ষত নিয়েও তারা কিছু সময় জীবিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন তারা। প্রথমে সাগর এবং পরে রুনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ বিশ্লেষণ করে অনুমান করা হচ্ছে, রুনি আগে মারা যান। হত্যার সময় তাদের সন্তান মেঘ একই খাটে ঘুমিয়ে ছিল।
সাগর বাধা দিতে পারেন—এমন আশঙ্কায় তার হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। তবে রুনির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি, কারণ ঘাতকরা তাকে নারী হিসেবে শারীরিকভাবে দুর্বল মনে করেছিল।
ঘটনাস্থল থেকে চারজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়—তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। এর মধ্যে দু’জন সাগর ও রুনি হলেও অন্য দু’জনের পরিচয় এখনও অজানা। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খুনের পরদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তার আগেই সাংবাদিক ও স্থানীয়দের ভিড়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়।
রান্নাঘরের বারান্দায় একটি সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশ পাওয়া যায়, যেটি নতুন এবং সেটি দিয়ে একজন মানুষ প্রবেশ-প্রস্থান করতে সক্ষম—এমন ধারণা করা হচ্ছে। তবে সেই স্থানে পূর্ণাঙ্গ কোনো পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।
তদন্তে দাম্পত্য কলহ, পেশাগত শত্রুতা বা চুরির মতো কোনো মোটিভের প্রমাণ মেলেনি। এছাড়া ভিসেরা পরীক্ষায় বিষ বা চেতনানাশক জাতীয় কোনো উপাদানও পাওয়া যায়নি।
পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে টাস্কফোর্স। হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী এই সময় বর্ধিত করার আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ এবং রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
উল্লেখ্য, হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছরের অক্টোবর মাসে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এতে সিআইডি, র্যাব এবং পুলিশের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন