
দীর্ঘ আইনি লড়াই ও প্রশাসনিক টানাপড়েনের পর অবশেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ বাড়ির নামজারির কাগজ তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার (৪ জুন) বিকেলে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল তার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র বুঝিয়ে দেয়।
১৯৮১ সালে সামরিক শাসক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর প্রায় চার দশক ধরে তিনি ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
তবে গত দুই দশকে রাজনৈতিক উত্তেজনা, ক্ষমতার পালাবদল এবং বিভিন্ন সময় সম্পত্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু সময় এই বাড়ির মালিকানা চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর প্রেক্ষাপটে বাড়িটির নামজারি, মিউটেশন ও দখল বিষয়েও অস্পষ্টতা তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নানা বিষয়ে সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা আনতে চায় বলে ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ অধিদপ্তর এবং ঢাকার ভূমি অফিসের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার নামে গুলশান ২–এর পারিবারিক বাড়িটির নামজারি চূড়ান্ত করা হয়।
সরকারি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার পরিবারের দেওয়া দলিল, ভোগদখল এবং আগের সরকারি বরাদ্দের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মালিকানা স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“এটি শুধুমাত্র একটি সম্পত্তির স্বীকৃতি নয়, বরং ন্যায়ের প্রতিফলন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নেত্রী যেভাবে অবিচারের শিকার হয়েছেন, এটা তার প্রতিকার মাত্র।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, এই সরকারের এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা দেবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা ফেরাবে।”
এখনো পর্যন্ত সরকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে প্রশাসনিক একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক সম্প্রীতির অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এতে কারো প্রতি কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, বরং নথিভুক্ত বাস্তবতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় সংলাপ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপস্থিতি পুনর্বাসনের মতো বড় কৌশলগত সিদ্ধান্তের পটভূমিতে এই হস্তান্তর গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। এটি সরকারের একটি নমনীয় অবস্থান নির্দেশ করে, যার ফলে বিরোধী পক্ষের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির পথ আরও উন্মুক্ত হতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুলশান বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটেছে। এখন দেখার বিষয়, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক মেরুকরণ হ্রাস ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।