০৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ

বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহ নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্প্রতি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার কারণে জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

🔥 ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার তাৎক্ষণিক প্রভাব

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান হুমকি দিয়েছে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার। ফলে বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে $৭৮–$৮০/ব্যারেলে পৌঁছেছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০% সামুদ্রিক তেল সরবরাহ হয়ে থাকে।

বিশ্ববাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে ব্রেন্টের দাম $১১০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

◼️ ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা

রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটির তেল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া ইরান, লিবিয়া, ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলোতেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যা বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করছে।

◼️ উৎপাদন হ্রাস

ওপেক ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়াতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে পুরনো খনির কার্যকারিতা কমে গেছে, যা উৎপাদন ব্যাহত করছে।

◼️ পরিবহন সংকট

পাইপলাইন ও সমুদ্রপথে সরবরাহের ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তেলবাহী জাহাজ ও অবকাঠামো। কখনও রাজনৈতিক, কখনও প্রযুক্তিগত কারণে এই পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।

◼️ চাহিদা বৃদ্ধি

শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তেলের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোয় অর্থনৈতিক গতি বাড়ার ফলেও জ্বালানির ওপর চাপ পড়ছে।

✅ করণীয়: সম্ভাব্য পদক্ষেপ

✔️ বিকল্প উৎস অনুসন্ধান

বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ এবং বায়োগ্যাসের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।

✔️ জ্বালানি সাশ্রয়

ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার পর্যায়ে সচেতনভাবে জ্বালানির ব্যবহার কমানো দরকার। শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও নীতিমালা গ্রহণ এই সংকটে উপকারী হতে পারে।

✔️ কূটনৈতিক তৎপরতা

বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোকে নিয়ে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করতে হবে। জাতিসংঘ ও জি-২০ প্ল্যাটফর্মে এ বিষয়ে জোরালো আলোচনার প্রয়োজন।

তেল সরবরাহে চলমান এই অস্থিরতা শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন, যাতে বিকল্প উৎস, সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং কূটনৈতিক চাপ—তিনটি দিকেই সমান মনোযোগ দেওয়া হয়।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:২০:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহ নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্প্রতি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার কারণে জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

🔥 ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার তাৎক্ষণিক প্রভাব

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান হুমকি দিয়েছে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার। ফলে বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৪ শতাংশ বেড়ে $৭৮–$৮০/ব্যারেলে পৌঁছেছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০% সামুদ্রিক তেল সরবরাহ হয়ে থাকে।

বিশ্ববাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে ব্রেন্টের দাম $১১০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

◼️ ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা

রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটির তেল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া ইরান, লিবিয়া, ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলোতেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যা বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি করছে।

◼️ উৎপাদন হ্রাস

ওপেক ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়াতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে পুরনো খনির কার্যকারিতা কমে গেছে, যা উৎপাদন ব্যাহত করছে।

◼️ পরিবহন সংকট

পাইপলাইন ও সমুদ্রপথে সরবরাহের ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তেলবাহী জাহাজ ও অবকাঠামো। কখনও রাজনৈতিক, কখনও প্রযুক্তিগত কারণে এই পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।

◼️ চাহিদা বৃদ্ধি

শীতকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় তেলের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোয় অর্থনৈতিক গতি বাড়ার ফলেও জ্বালানির ওপর চাপ পড়ছে।

✅ করণীয়: সম্ভাব্য পদক্ষেপ

✔️ বিকল্প উৎস অনুসন্ধান

বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ এবং বায়োগ্যাসের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।

✔️ জ্বালানি সাশ্রয়

ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার পর্যায়ে সচেতনভাবে জ্বালানির ব্যবহার কমানো দরকার। শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও নীতিমালা গ্রহণ এই সংকটে উপকারী হতে পারে।

✔️ কূটনৈতিক তৎপরতা

বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোকে নিয়ে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করতে হবে। জাতিসংঘ ও জি-২০ প্ল্যাটফর্মে এ বিষয়ে জোরালো আলোচনার প্রয়োজন।

তেল সরবরাহে চলমান এই অস্থিরতা শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন, যাতে বিকল্প উৎস, সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং কূটনৈতিক চাপ—তিনটি দিকেই সমান মনোযোগ দেওয়া হয়।