০৪:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিবিসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ: রবি গিবের অপসারণ চেয়ে শিল্প-সাহিত্য জগতের খোলা চিঠি

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)-এর বোর্ড সদস্য রবি গিবের বিরুদ্ধে ইসরায়েলপন্থী পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তাকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও গণমাধ্যমজগতের ৪০০-র বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি। বুধবার প্রকাশিত একটি খোলা চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়েছে, যার স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী মিরিয়াম মার্গোলিস, লেখক অ্যালেক্সি সেল, পরিচালক মাইক লেই এবং অন্তত ১১১ জন বর্তমান বিবিসি কর্মচারী।

চিঠিতে বলা হয়, রবি গিবের অতীতের ভূমিকা—বিশেষ করে ইহুদি ক্রনিকলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—বিবিসির সম্পাদকীয় নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গিব ২০২০ সালে একটি কনসোর্টিয়াম পরিচালনা করতেন, যা ঐ লন্ডনভিত্তিক প্রকাশনাটি অধিগ্রহণ করে এবং তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার বোর্ডে কর্মরত ছিলেন।

স্বাক্ষরকারীরা অভিযোগ করেন, গিবের এই সম্পর্ক বিবিসির মধ্যকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা জোর দিয়ে বলেন, গিবের বোর্ডে উপস্থিতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনের নিরপেক্ষতা নীতিকে ক্ষুণ্ণ করছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, বিবিসি একদিকে সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েল-বিরোধী পোস্টের জন্য সাংবাদিকদের তিরস্কার করে, আবার অন্যদিকে গিবের মতো পক্ষপাতদুষ্ট একজন ব্যক্তিকে প্রভাবশালী পদে রাখে। এতে গণমাধ্যমটির দ্বৈত নীতির সমালোচনা করা হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, “গাজা: ডক্টরস আন্ডার অ্যাটাক” নামের একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার না করার সিদ্ধান্তও গিবের প্রভাবের অংশ হতে পারে। চিঠিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত বিবিসির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এছাড়া, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির আইনি দিক বিবিসি এড়িয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

১১১ জন বিবিসি কর্মচারী এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন নাম গোপন রেখে, কারণ তারা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয় পাচ্ছেন।

বিবিসি এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, “সম্পাদকীয় দলের মধ্যে জোরালো আলোচনা স্বাভাবিক এবং আমাদের ভিতরে এসব আলোচনা নিরাপদে করা যেতে পারে।” তারা দাবি করেছে, গাজার ঘটনাবলি নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়েছে এবং গাজা থেকে শক্তিশালী রিপোর্ট ও বিশ্লেষণ তারা প্রচার করেছে।

তবে বাস্তবতা হলো, সম্প্রতি বিবিসি ‘গাজা: ডক্টরস আন্ডার অ্যাটাক’ তথ্যচিত্রটি বাতিল করেছে “নিরপেক্ষতার উদ্বেগের” অজুহাতে, যা চ্যানেল ৪ সম্প্রচার করে। ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত “গাজা: সারভাইভিং ইন আ ওয়ার জোন” নামক আরেকটি তথ্যচিত্র নিয়েও বিবিসি পরে ক্ষমা চায়, যেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর যুদ্ধের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল, মার্কিন সহায়তায় গাজায় এক দীর্ঘ ও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ১,৯২,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বহু শিশু দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে। গাজার ১৮ বছরের অবরোধ এবং চলমান হামলায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে।


ট্যাগ

বিবিসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ: রবি গিবের অপসারণ চেয়ে শিল্প-সাহিত্য জগতের খোলা চিঠি

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:৪০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)-এর বোর্ড সদস্য রবি গিবের বিরুদ্ধে ইসরায়েলপন্থী পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তাকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও গণমাধ্যমজগতের ৪০০-র বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি। বুধবার প্রকাশিত একটি খোলা চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়েছে, যার স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী মিরিয়াম মার্গোলিস, লেখক অ্যালেক্সি সেল, পরিচালক মাইক লেই এবং অন্তত ১১১ জন বর্তমান বিবিসি কর্মচারী।

চিঠিতে বলা হয়, রবি গিবের অতীতের ভূমিকা—বিশেষ করে ইহুদি ক্রনিকলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—বিবিসির সম্পাদকীয় নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গিব ২০২০ সালে একটি কনসোর্টিয়াম পরিচালনা করতেন, যা ঐ লন্ডনভিত্তিক প্রকাশনাটি অধিগ্রহণ করে এবং তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার বোর্ডে কর্মরত ছিলেন।

স্বাক্ষরকারীরা অভিযোগ করেন, গিবের এই সম্পর্ক বিবিসির মধ্যকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা জোর দিয়ে বলেন, গিবের বোর্ডে উপস্থিতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনের নিরপেক্ষতা নীতিকে ক্ষুণ্ণ করছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, বিবিসি একদিকে সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েল-বিরোধী পোস্টের জন্য সাংবাদিকদের তিরস্কার করে, আবার অন্যদিকে গিবের মতো পক্ষপাতদুষ্ট একজন ব্যক্তিকে প্রভাবশালী পদে রাখে। এতে গণমাধ্যমটির দ্বৈত নীতির সমালোচনা করা হয়।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, “গাজা: ডক্টরস আন্ডার অ্যাটাক” নামের একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার না করার সিদ্ধান্তও গিবের প্রভাবের অংশ হতে পারে। চিঠিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত বিবিসির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এছাড়া, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির আইনি দিক বিবিসি এড়িয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

১১১ জন বিবিসি কর্মচারী এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন নাম গোপন রেখে, কারণ তারা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয় পাচ্ছেন।

বিবিসি এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, “সম্পাদকীয় দলের মধ্যে জোরালো আলোচনা স্বাভাবিক এবং আমাদের ভিতরে এসব আলোচনা নিরাপদে করা যেতে পারে।” তারা দাবি করেছে, গাজার ঘটনাবলি নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয়েছে এবং গাজা থেকে শক্তিশালী রিপোর্ট ও বিশ্লেষণ তারা প্রচার করেছে।

তবে বাস্তবতা হলো, সম্প্রতি বিবিসি ‘গাজা: ডক্টরস আন্ডার অ্যাটাক’ তথ্যচিত্রটি বাতিল করেছে “নিরপেক্ষতার উদ্বেগের” অজুহাতে, যা চ্যানেল ৪ সম্প্রচার করে। ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত “গাজা: সারভাইভিং ইন আ ওয়ার জোন” নামক আরেকটি তথ্যচিত্র নিয়েও বিবিসি পরে ক্ষমা চায়, যেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর যুদ্ধের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল, মার্কিন সহায়তায় গাজায় এক দীর্ঘ ও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ১,৯২,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বহু শিশু দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে। গাজার ১৮ বছরের অবরোধ এবং চলমান হামলায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে।