১২:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ বলার প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: মির্জা ফখরুল

বিএনপিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সংস্কারবিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিল এবং আজও আছে।

রোববার (৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তি বিএনপির সংস্কার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা ছিল। এরপর ২০২২ সালে আমরা ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছি। এই কর্মসূচি নিয়ে আমরা সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেছি, জনগণের কাছে গেছি, সুধী সমাজের কাছে গেছি।”

তিনি বলেন, “আজকে একটি মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ১৫ বছরের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপি যে ভূমিকা রেখেছে, তা সবারই জানা। কত সমাবেশ, কত লাঠিপেটা, কত সহ্য করেছি। তা সত্ত্বেও আমাদের সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে—এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা চক্র বিএনপিকে ‘মেলাইন’ করার চেষ্টা করছে। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে জনগণ এসব প্রচারণার সঙ্গে একমত নয়। জনগণ মানে গুটিকয়েক শহুরে লোক নয়—জনগণ মানে সারা বাংলাদেশ।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথিকৃৎ জিয়াউর রহমানই প্রথম এ দেশে রাজনৈতিক সংস্কার চালু করেন। বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংগঠনের অধিকার, সংসদীয় গণতন্ত্র এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ সবকিছু বিএনপির হাত ধরেই এসেছে। এমনকি মুক্তবাজার অর্থনীতি, বেসরকারি খাতের বিকাশ—সবই বিএনপির সংস্কারের ফল।”

বিএনপিকে ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টাকে ‘অকার্যকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চেনে, ভালো জানে। বিএনপি সব সময় দেশের কল্যাণেই কাজ করেছে।”

‘নির্বাচন বিলম্বিত করা গণতন্ত্রের শক্তির পরিচায়ক নয়’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষেও নয়।”

এ সময় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি—স্বৈরাচার যেন আর ফিরে না আসে, সে জন্য সাংবিধানিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বিএনপির অবস্থান হলো, কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “সংবিধান মেনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ কার্যকরভাবে কাজ করুক, আমরা চাই। তবে তার কাজে যেন অন্য কোনো অঙ্গ বা বডি হস্তক্ষেপ না করে—সেজন্য আমরা এনসিসির মতো ধারণার পক্ষে নই। এটিই আমাদের বক্তব্য।”

তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং বিএনপি আশা করে সাংবিধানিক বিষয়ের ওপর একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠবে।

ট্যাগ

বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ বলার প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:৩৬:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

বিএনপিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সংস্কারবিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিল এবং আজও আছে।

রোববার (৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তি বিএনপির সংস্কার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা ছিল। এরপর ২০২২ সালে আমরা ২৭ দফা এবং ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছি। এই কর্মসূচি নিয়ে আমরা সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেছি, জনগণের কাছে গেছি, সুধী সমাজের কাছে গেছি।”

তিনি বলেন, “আজকে একটি মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ১৫ বছরের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপি যে ভূমিকা রেখেছে, তা সবারই জানা। কত সমাবেশ, কত লাঠিপেটা, কত সহ্য করেছি। তা সত্ত্বেও আমাদের সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে—এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা চক্র বিএনপিকে ‘মেলাইন’ করার চেষ্টা করছে। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে জনগণ এসব প্রচারণার সঙ্গে একমত নয়। জনগণ মানে গুটিকয়েক শহুরে লোক নয়—জনগণ মানে সারা বাংলাদেশ।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথিকৃৎ জিয়াউর রহমানই প্রথম এ দেশে রাজনৈতিক সংস্কার চালু করেন। বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংগঠনের অধিকার, সংসদীয় গণতন্ত্র এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ সবকিছু বিএনপির হাত ধরেই এসেছে। এমনকি মুক্তবাজার অর্থনীতি, বেসরকারি খাতের বিকাশ—সবই বিএনপির সংস্কারের ফল।”

বিএনপিকে ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টাকে ‘অকার্যকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে চেনে, ভালো জানে। বিএনপি সব সময় দেশের কল্যাণেই কাজ করেছে।”

‘নির্বাচন বিলম্বিত করা গণতন্ত্রের শক্তির পরিচায়ক নয়’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষেও নয়।”

এ সময় জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি—স্বৈরাচার যেন আর ফিরে না আসে, সে জন্য সাংবিধানিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বিএনপির অবস্থান হলো, কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “সংবিধান মেনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ কার্যকরভাবে কাজ করুক, আমরা চাই। তবে তার কাজে যেন অন্য কোনো অঙ্গ বা বডি হস্তক্ষেপ না করে—সেজন্য আমরা এনসিসির মতো ধারণার পক্ষে নই। এটিই আমাদের বক্তব্য।”

তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং বিএনপি আশা করে সাংবিধানিক বিষয়ের ওপর একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠবে।