১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর পরও বন্ধ হয় না আমলের হিসাব

মানুষের দুনিয়ার জীবন সীমিত এবং একসময় তা মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু মানুষের জীবদ্দশায় করা কাজের প্রভাব অনেক সময় মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে রয়ে যায়। এই প্রভাব ভালো হলে তা সওয়াবের উৎস হয়ে দাঁড়ায়, আবার মন্দ হলে গুনাহের ধারক হয়। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষ দুনিয়ায় থেকে যাওয়ার পরও তার রেখে যাওয়া কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সওয়াব বা গুনাহ পেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “আমিই মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠিয়ে দেয় এবং যা পেছনে রেখে যায়। সব কিছুই আমি স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।” (সূরা ইয়াসিন: ১২)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মানুষের জীবদ্দশায় করা কর্ম ও মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া প্রভাব—দু’টিই আল্লাহর নিকট গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো কাজের মধ্যে রয়েছে দ্বীনি শিক্ষা প্রদান, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, সদকায়ে জারিয়া প্রতিষ্ঠা করা, মসজিদ নির্মাণ, কূপ খনন ইত্যাদি জনহিতকর কাজ—যেগুলোর উপকার মানুষের মাঝে অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে, মন্দ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অশ্লীলতা ছড়ানো, ভুল আকীদা ও মতবাদ প্রচার, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানো, হারাম প্রতিষ্ঠানের প্রচলন ইত্যাদি। এ সব কিছুর প্রভাব যতদিন সমাজে থাকবে, ততদিন সওয়াব বা গুনাহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদীসে বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থা প্রবর্তন করে, তার জন্য রয়েছে সেই আমলের সওয়াব এবং যারা তা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবও তার আমলনামায় যোগ হবে। আর যে ব্যক্তি কুপ্রথা চালু করে, সে নিজে যেমন গুনাহের ভাগীদার হবে, তেমনি যারা তা অনুসরণ করবে তাদের গুনাহও তার ওপর বর্তাবে।” (সহিহ মুসলিম: ১০১৭)। আরেক হাদীসে এসেছে, “যে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তার গুনাহের একটি অংশ প্রথম হত্যাকারীর ওপর বর্তাবে, কারণ তিনিই প্রথম হত্যার পথ খুলে দিয়েছে।” (সহিহ বোখারি: ৩৩৩৫, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৭)

ধর্মীয় বিশ্লেষকদের মতে, এই শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে তোলে তার কর্মের ভবিষ্যত প্রভাব সম্পর্কে। তাই মৃত্যুর আগে একজন মানুষের উচিত সমাজে কল্যাণকর কিছু রেখে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে। একইসাথে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন তার কোনো কাজ থেকে ভবিষ্যতে গুনাহ না ছড়ায়।

ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ যেন এমন কিছু করে না যায় যার ফলে মৃত্যুর পরও গুনাহ লেখা হতে থাকে। বরং মানুষের উচিত এমন কিছু কর্ম রেখে যাওয়া যার কল্যাণ সমাজে প্রবাহিত হয় এবং যার কারণে আল্লাহর নিকট সে পুরস্কৃত হয়। আল্লাহ তাআলা যেন সবাইকে এমন চলমান সওয়াবের পথ গ্রহণের তাওফিক দান করেন।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মৃত্যুর পরও বন্ধ হয় না আমলের হিসাব

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

মানুষের দুনিয়ার জীবন সীমিত এবং একসময় তা মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু মানুষের জীবদ্দশায় করা কাজের প্রভাব অনেক সময় মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে রয়ে যায়। এই প্রভাব ভালো হলে তা সওয়াবের উৎস হয়ে দাঁড়ায়, আবার মন্দ হলে গুনাহের ধারক হয়। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষ দুনিয়ায় থেকে যাওয়ার পরও তার রেখে যাওয়া কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সওয়াব বা গুনাহ পেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “আমিই মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠিয়ে দেয় এবং যা পেছনে রেখে যায়। সব কিছুই আমি স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।” (সূরা ইয়াসিন: ১২)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মানুষের জীবদ্দশায় করা কর্ম ও মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া প্রভাব—দু’টিই আল্লাহর নিকট গণনায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো কাজের মধ্যে রয়েছে দ্বীনি শিক্ষা প্রদান, নেক সন্তান রেখে যাওয়া, সদকায়ে জারিয়া প্রতিষ্ঠা করা, মসজিদ নির্মাণ, কূপ খনন ইত্যাদি জনহিতকর কাজ—যেগুলোর উপকার মানুষের মাঝে অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে, মন্দ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অশ্লীলতা ছড়ানো, ভুল আকীদা ও মতবাদ প্রচার, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানো, হারাম প্রতিষ্ঠানের প্রচলন ইত্যাদি। এ সব কিছুর প্রভাব যতদিন সমাজে থাকবে, ততদিন সওয়াব বা গুনাহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদীসে বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থা প্রবর্তন করে, তার জন্য রয়েছে সেই আমলের সওয়াব এবং যারা তা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবও তার আমলনামায় যোগ হবে। আর যে ব্যক্তি কুপ্রথা চালু করে, সে নিজে যেমন গুনাহের ভাগীদার হবে, তেমনি যারা তা অনুসরণ করবে তাদের গুনাহও তার ওপর বর্তাবে।” (সহিহ মুসলিম: ১০১৭)। আরেক হাদীসে এসেছে, “যে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তার গুনাহের একটি অংশ প্রথম হত্যাকারীর ওপর বর্তাবে, কারণ তিনিই প্রথম হত্যার পথ খুলে দিয়েছে।” (সহিহ বোখারি: ৩৩৩৫, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৭)

ধর্মীয় বিশ্লেষকদের মতে, এই শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে তোলে তার কর্মের ভবিষ্যত প্রভাব সম্পর্কে। তাই মৃত্যুর আগে একজন মানুষের উচিত সমাজে কল্যাণকর কিছু রেখে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে। একইসাথে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন তার কোনো কাজ থেকে ভবিষ্যতে গুনাহ না ছড়ায়।

ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ যেন এমন কিছু করে না যায় যার ফলে মৃত্যুর পরও গুনাহ লেখা হতে থাকে। বরং মানুষের উচিত এমন কিছু কর্ম রেখে যাওয়া যার কল্যাণ সমাজে প্রবাহিত হয় এবং যার কারণে আল্লাহর নিকট সে পুরস্কৃত হয়। আল্লাহ তাআলা যেন সবাইকে এমন চলমান সওয়াবের পথ গ্রহণের তাওফিক দান করেন।