১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনের সুযোগ হারালে দেশ বহু বছর পিছিয়ে পড়বে: ফখরুল

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “প্রতিবার আন্দোলনে মানুষ প্রাণ দেয়, সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এটা আর হওয়া চলবে না। এবারও যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ হারাই, তাহলে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে যাবে।”

শনিবার (১৯ জুলাই) গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, “আমরা জোটবদ্ধ হয়েছিলাম দায়িত্ববোধ থেকে, সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য। এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গুম হয়েছেন ১৭০০-এর বেশি মানুষ, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, এমনকি দুই হাজারের বেশি শিশু-কিশোরকেও হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্য দিয়েই আমরা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দিতে পেরেছি। এখন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার একটি সুযোগ এসেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই সুযোগটাও আবার বিপন্ন হতে চলেছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা আবার সংঘবদ্ধ হচ্ছে। হত্যা, গুম, নির্যাতন বাড়ছে।”

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সংকটের সমাধান নিহিত সংস্কার, সনদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই দয়া করে কালবিলম্ব করবেন না। একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা দিন যাতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের প্রধান একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার সহনশীলতা, আলোচনা ও জাতীয় ঐক্য।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আবার জনগণের কাছে ফিরে যাব। ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই। ১৯৭১ সালে যেমন জনগণ স্বাধীনতা চেয়েছিল, আজ তেমনি গণতন্ত্র চায়।”

সভার অন্যান্য বক্তারাও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জেএসডির নেত্রী তানিয়া রব।

এদিকে, একইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে বিএনপির কোনো নেতার উপস্থিতি ছিল না। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, দলটি জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “জামায়াত আমন্ত্রণ জানায়নি, তাই বিএনপির কেউ সেখানে যায়নি।”

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, তারা সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। ‘৭ দফা’ দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও বিএনপি অনুপস্থিত ছিল—যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন তৈরি করেছে।

ট্যাগ

আন্দোলনের সুযোগ হারালে দেশ বহু বছর পিছিয়ে পড়বে: ফখরুল

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:১৪:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “প্রতিবার আন্দোলনে মানুষ প্রাণ দেয়, সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এটা আর হওয়া চলবে না। এবারও যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ হারাই, তাহলে বাংলাদেশ বহু বছর পিছিয়ে যাবে।”

শনিবার (১৯ জুলাই) গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, “আমরা জোটবদ্ধ হয়েছিলাম দায়িত্ববোধ থেকে, সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য। এই সংগ্রামে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গুম হয়েছেন ১৭০০-এর বেশি মানুষ, হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, এমনকি দুই হাজারের বেশি শিশু-কিশোরকেও হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্য দিয়েই আমরা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দিতে পেরেছি। এখন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার একটি সুযোগ এসেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই সুযোগটাও আবার বিপন্ন হতে চলেছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা আবার সংঘবদ্ধ হচ্ছে। হত্যা, গুম, নির্যাতন বাড়ছে।”

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সংকটের সমাধান নিহিত সংস্কার, সনদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই দয়া করে কালবিলম্ব করবেন না। একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা দিন যাতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের প্রধান একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার সহনশীলতা, আলোচনা ও জাতীয় ঐক্য।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আবার জনগণের কাছে ফিরে যাব। ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই। ১৯৭১ সালে যেমন জনগণ স্বাধীনতা চেয়েছিল, আজ তেমনি গণতন্ত্র চায়।”

সভার অন্যান্য বক্তারাও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জেএসডির নেত্রী তানিয়া রব।

এদিকে, একইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে বিএনপির কোনো নেতার উপস্থিতি ছিল না। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, দলটি জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “জামায়াত আমন্ত্রণ জানায়নি, তাই বিএনপির কেউ সেখানে যায়নি।”

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, তারা সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ চালিয়ে গেছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। ‘৭ দফা’ দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও বিএনপি অনুপস্থিত ছিল—যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন তৈরি করেছে।