০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবাধিকার দপ্তর মতবিরোধ: কেউ দেখছেন সুযোগ, কেউ হুমকি

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) একটি মিশন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে জাতিসংঘের এক সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি এই উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সরকারের মতে, মানবাধিকার সংরক্ষণ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইনি সহায়তার লক্ষ্যেই এই দপ্তর খোলা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কাজ করে। নির্যাতন, বৈষম্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নারী ও শিশু অধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরি করে, যা জাতিসংঘের নীতিনির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ওএইচসিএইচআরের সদর দপ্তর জেনেভায় হলেও বিশ্বের মাত্র ১৬টি দেশে তাদের স্থায়ী অফিস রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথম বাংলাদেশে অফিস চালু হতে যাচ্ছে।

তবে এই উদ্যোগ ঘিরে বিরোধও দেখা দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ ইসলামপন্থি দলগুলো এই মিশন চালুর বিরোধিতা করে বলেছে, এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এলজিবিটি ইস্যু ও নারী অধিকারের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের আশঙ্কা—ওএইচসিএইচআরের কার্যক্রম “পশ্চিমা এজেন্ডা” বাস্তবায়নের চেষ্টা হতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এই কমিশন মুসলিম দেশগুলোকে লক্ষ্য করে পক্ষপাতমূলকভাবে কাজ করে এসেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসে ভূমিকা রেখেছে। এদিকে, ইসলামি দলগুলোও বিক্ষোভ, সমাবেশের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, মানবাধিকার কর্মীরা এই অফিসকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, অতীতের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, এবং রাজনৈতিক সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্তে এই মিশন ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনাকে তিনি এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করেন।

সরকারের প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ওএইচসিএইচআরের মিশন দেশের আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না।” একই সঙ্গে স্বীকার করা হয় যে, সমাজের একটি অংশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তবে মিশনের কর্মীদের দায়মুক্তি থাকবে কি না––এই প্রশ্নটি নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, “যদি দায়মুক্তি দেওয়া হয়, তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের এই উপস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার বাস্তবতা, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মানবাধিকার দপ্তর মতবিরোধ: কেউ দেখছেন সুযোগ, কেউ হুমকি

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:২৯:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) একটি মিশন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে জাতিসংঘের এক সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি এই উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সরকারের মতে, মানবাধিকার সংরক্ষণ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইনি সহায়তার লক্ষ্যেই এই দপ্তর খোলা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কাজ করে। নির্যাতন, বৈষম্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নারী ও শিশু অধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরি করে, যা জাতিসংঘের নীতিনির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ওএইচসিএইচআরের সদর দপ্তর জেনেভায় হলেও বিশ্বের মাত্র ১৬টি দেশে তাদের স্থায়ী অফিস রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথম বাংলাদেশে অফিস চালু হতে যাচ্ছে।

তবে এই উদ্যোগ ঘিরে বিরোধও দেখা দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ ইসলামপন্থি দলগুলো এই মিশন চালুর বিরোধিতা করে বলেছে, এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এলজিবিটি ইস্যু ও নারী অধিকারের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের আশঙ্কা—ওএইচসিএইচআরের কার্যক্রম “পশ্চিমা এজেন্ডা” বাস্তবায়নের চেষ্টা হতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এই কমিশন মুসলিম দেশগুলোকে লক্ষ্য করে পক্ষপাতমূলকভাবে কাজ করে এসেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসে ভূমিকা রেখেছে। এদিকে, ইসলামি দলগুলোও বিক্ষোভ, সমাবেশের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, মানবাধিকার কর্মীরা এই অফিসকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, অতীতের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, এবং রাজনৈতিক সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্তে এই মিশন ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনাকে তিনি এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করেন।

সরকারের প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ওএইচসিএইচআরের মিশন দেশের আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না।” একই সঙ্গে স্বীকার করা হয় যে, সমাজের একটি অংশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তবে মিশনের কর্মীদের দায়মুক্তি থাকবে কি না––এই প্রশ্নটি নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, “যদি দায়মুক্তি দেওয়া হয়, তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের এই উপস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার বাস্তবতা, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।