০৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে

❖ ভাইরাল জ্বর বাড়ছে ঢাকায়, রোগীর ভিড়ে চাপে হাসপাতাল
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে বেড়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে জুলাইয়ের শেষ ১৪ দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৮ শতাংশেরও বেশি। ফলে সেবা দিতে গিয়ে চাপে পড়েছে হাসপাতালগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত ঋতু পরিবর্তনজনিত ভাইরাল সংক্রমণ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

❖ এক পরিবারে একাধিক সদস্য আক্রান্ত, সংক্রমণের গতি উদ্বেগজনক
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একই পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গগুলো প্রায় অভিন্ন— চার-পাঁচ দিন স্থায়ী মাঝারি জ্বর, গলাব্যথা, গলা খুসখুসে কাশি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ও চোখ দিয়ে পানি পড়া।

❖ সরকারি হাসপাতালে রোগীর ঢল, পরিসংখ্যান বলছে বাস্তবতা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার রোগী। কিন্তু পরের ১৪ দিনে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার, অর্থাৎ প্রায় ১৮.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সময়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি ছিলেন ৮২০ জন, যেখানে প্রথম ১৪ দিনে ছিল ৭২৫ জন।

❖ বাস্তব আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি, সেবা নিচ্ছেন বাসায়
অনেকে এখন ফার্মেসির পরামর্শে, টেলিমেডিসিন বা পরিচিত চিকিৎসকের সহায়তায় বাসায় থেকেই সেবা নিচ্ছেন। ফলে সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

❖ ভিন্ন ভাইরাস একসঙ্গে ছড়াচ্ছে, রোগ নির্ণয়ে বাড়ছে জটিলতা
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, “জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও দুর্বলতা—এই চারটি উপসর্গ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাল ফ্লু একসঙ্গে ছড়ানোয় রোগ নির্ণয় জটিল হচ্ছে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে দেরি করছেন, এতে জটিলতা বাড়ছে।”

❖ রোগীদের অভিজ্ঞতা: “একসঙ্গে পুরো পরিবার আক্রান্ত”
খিলগাঁওয়ের আব্দুস সালাম জানান, “তিন দিন ধরে জ্বর, শরীর ব্যথা, কাশি চলছে। আমার  ছেলেও আক্রান্ত। হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নিচ্ছি।”   আফতাফ নগরের বাসিন্দা  আমির হোসেন বলেন, “আমি প্রথমে আক্রান্ত হই, পরে স্ত্রী-ছেলে—সবার উপসর্গ একই।”

❖ চিকিৎসকের পরামর্শ: অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বিশ্রামই যথেষ্ট
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “এই ভাইরাল ফ্লুতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের দরকার নেই। সাধারণ প্যারাসিটামল ও বিশ্রামেই উপসর্গ কমে যায়। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো জরুরি।”

❖ ঋতু বৈচিত্র্য এবং অসচেতনতা সংক্রমণের মূল কারণ
ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, “গরম-ঠান্ডা বৃষ্টি মিলিয়ে আবহাওয়ার চরম বৈচিত্র্য ভাইরাস সংক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাব, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করা এবং ঘন জনসমাগম পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।”


ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ঢাকায় ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:৪৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

❖ ভাইরাল জ্বর বাড়ছে ঢাকায়, রোগীর ভিড়ে চাপে হাসপাতাল
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে বেড়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে জুলাইয়ের শেষ ১৪ দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৮ শতাংশেরও বেশি। ফলে সেবা দিতে গিয়ে চাপে পড়েছে হাসপাতালগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত ঋতু পরিবর্তনজনিত ভাইরাল সংক্রমণ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

❖ এক পরিবারে একাধিক সদস্য আক্রান্ত, সংক্রমণের গতি উদ্বেগজনক
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একই পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গগুলো প্রায় অভিন্ন— চার-পাঁচ দিন স্থায়ী মাঝারি জ্বর, গলাব্যথা, গলা খুসখুসে কাশি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ও চোখ দিয়ে পানি পড়া।

❖ সরকারি হাসপাতালে রোগীর ঢল, পরিসংখ্যান বলছে বাস্তবতা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার রোগী। কিন্তু পরের ১৪ দিনে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার, অর্থাৎ প্রায় ১৮.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সময়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি ছিলেন ৮২০ জন, যেখানে প্রথম ১৪ দিনে ছিল ৭২৫ জন।

❖ বাস্তব আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি, সেবা নিচ্ছেন বাসায়
অনেকে এখন ফার্মেসির পরামর্শে, টেলিমেডিসিন বা পরিচিত চিকিৎসকের সহায়তায় বাসায় থেকেই সেবা নিচ্ছেন। ফলে সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

❖ ভিন্ন ভাইরাস একসঙ্গে ছড়াচ্ছে, রোগ নির্ণয়ে বাড়ছে জটিলতা
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, “জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও দুর্বলতা—এই চারটি উপসর্গ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ভাইরাল ফ্লু একসঙ্গে ছড়ানোয় রোগ নির্ণয় জটিল হচ্ছে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে দেরি করছেন, এতে জটিলতা বাড়ছে।”

❖ রোগীদের অভিজ্ঞতা: “একসঙ্গে পুরো পরিবার আক্রান্ত”
খিলগাঁওয়ের আব্দুস সালাম জানান, “তিন দিন ধরে জ্বর, শরীর ব্যথা, কাশি চলছে। আমার  ছেলেও আক্রান্ত। হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নিচ্ছি।”   আফতাফ নগরের বাসিন্দা  আমির হোসেন বলেন, “আমি প্রথমে আক্রান্ত হই, পরে স্ত্রী-ছেলে—সবার উপসর্গ একই।”

❖ চিকিৎসকের পরামর্শ: অ্যান্টিবায়োটিক নয়, বিশ্রামই যথেষ্ট
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “এই ভাইরাল ফ্লুতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের দরকার নেই। সাধারণ প্যারাসিটামল ও বিশ্রামেই উপসর্গ কমে যায়। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো জরুরি।”

❖ ঋতু বৈচিত্র্য এবং অসচেতনতা সংক্রমণের মূল কারণ
ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, “গরম-ঠান্ডা বৃষ্টি মিলিয়ে আবহাওয়ার চরম বৈচিত্র্য ভাইরাস সংক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাব, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করা এবং ঘন জনসমাগম পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।”