
গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে যাওয়া এক ছাত্রীকে ইহুদি-বিরোধী পোস্টের অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিতর্কের জেরে ওই ছাত্রী দেশ ছেড়ে কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন বলে রোববার (৪ আগস্ট) নিশ্চিত করেছে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক দানা বাঁধে, যার ফলে ফরাসি সরকার গাজা থেকে সরিয়ে আনা শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত বৃত্তি কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে।
ছাত্রীটি সম্প্রতি ফরাসি সরকারের সহায়তায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে সরিয়ে এনে উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। তবে কিছু ডানপন্থী রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তার পুরোনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘেঁটে দাবি করে, তিনি ইহুদি-বিরোধী ও ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণামূলক মন্তব্য করেছেন।
ফরাসি সরকার দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জানায়, “ঘৃণামূলক বক্তব্য কিংবা বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদের নীতিমালার পরিপন্থী। এ ধরনের ঘটনায় আমরা শূন্য সহনশীলতা নীতিতে বিশ্বাস করি।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়। ফরাসি সংসদের একাধিক সদস্য এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পুরো বৃত্তি কর্মসূচি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। এর প্রেক্ষিতে সরকার গাজা থেকে সরিয়ে আনা শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপিত বৃত্তি প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই ঘটনাকে ঘিরে মানবাধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, গাজার মতো মানবিক সংকটে থাকা অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মতামতকে কেন্দ্র করে এমন প্রতিক্রিয়া দেওয়া অমানবিক এবং শিক্ষার অধিকারের পরিপন্থী। তারা বলছেন, একজন শিক্ষার্থীর পুরোনো পোস্ট ভিত্তিক সিদ্ধান্ত তার ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে এবং এটি প্রকারান্তরে গাজার শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক দরজা বন্ধ করার ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউরোপে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ ও ‘অ্যান্টি-জায়োনিজম’ বিতর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সমালোচনা ও বিদ্বেষের পার্থক্য অনির্দিষ্ট হয়ে পড়ছে, যার ফলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো আরও তীব্র ও দ্রুত হয়ে উঠছে।