
লেবাননের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগগুলোর একটি ছিল বৈরুত বন্দর বিস্ফোরণ, যা ২০২০ সালের ৪ আগস্টে পুরো শহরকে কাঁপিয়ে দেয়। সেই ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তিতে সোমবার (৪ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে দেশটি। রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন এ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, “ন্যায়বিচার আসছে”—এবং পুনর্ব্যক্ত করেন যে, এই বিপর্যয়ে যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বৈরুতের এই বিধ্বংসী বিস্ফোরণে ২২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন, আহত হন কয়েক হাজার। বিস্ফোরণটি ঘটে ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অনিরাপদভাবে বন্দরে বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষিত থাকার ফলে। এটি কেবল শহরের বড় অংশ ধ্বংস করেনি, বরং লেবাননের গভীর রাজনৈতিক অব্যবস্থা ও দুর্নীতির নগ্ন উদাহরণও প্রকাশ করে। ঘটনার পরপরই দেশব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিচার দাবিতে উত্তাল হয় রাজধানী।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও দায়ীদের সুরক্ষার অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে জনগণের ধৈর্যের প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি জানান, “আমরা ধীর গতিতে হলেও এগোচ্ছি। এই অপরাধ ভুলে যাওয়া যাবে না। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তারা একা নন।”
বিগত পাঁচ বছরে এই ঘটনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বিচার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ উঠে এসেছে। বহুবার তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছে, বিচারক বদল হয়েছে এবং অভিযোগপত্র আটকে পড়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার নিয়ে গভীর হতাশা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চম বার্ষিকীতে রাজধানীজুড়ে শোক পালন করা হয়, এবং দিনের শেষভাগে বিস্ফোরণের শিকার পরিবার ও নাগরিক সমাজের উদ্যোগে একটি বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, কেবল প্রতিশ্রুতি নয়—তাদের দরকার দৃশ্যমান বিচার এবং প্রকৃত জবাবদিহিতা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈরুত বন্দর বিস্ফোরণ লেবাননের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবে রূপ না পায়, তবে এই ট্রাজেডি শুধু অতীতের দুঃসহ স্মৃতি নয়, বরং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিয়ে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকবে।