
বিশ্বজুড়ে অবহেলিত নারী স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় গেটস ফাউন্ডেশন এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে নারী স্বাস্থ্যের জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হবে। এই বিনিয়োগের লক্ষ্য হলো বহুদিন ধরে অগ্রাহ্য, স্বল্প গবেষণাধীন এবং কম তহবিলপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং মেনোপজের মতো বিষয়গুলিকে গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা।
এটি গেটস ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত বৃহত্তম প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি এবং এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সেই বৃহৎ লক্ষ্য আবার সামনে চলে আসে—২০৪৫ সালের মধ্যে তার অধিকাংশ সম্পদ দান করে যাওয়া।
এই তহবিল গবেষণা, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবামূলক পণ্যের উন্নয়ন এবং এসব সেবা বিশ্বব্যাপী নারীদের জন্য ন্যায্যভাবে সহজলভ্য করে তোলার দিকে ব্যয় করা হবে। ফাউন্ডেশনটির ভাষ্যমতে, নারী স্বাস্থ্যব্যবস্থা দশকের পর দশক ধরে উপেক্ষিত থেকে গেছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে, যেখানে এসব জটিল রোগ দ্রুত শনাক্ত এবং চিকিৎসা পাওয়া এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।
গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস দীর্ঘদিন ধরেই নারী স্বাস্থ্য ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের পক্ষে সোচ্চার। এই নতুন তহবিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিল যে, নারীস্বাস্থ্য শুধু একটি স্বাস্থ্যগত ইস্যু নয়—এটি ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রিক্ল্যাম্পসিয়া গর্ভাবস্থায় মাতৃমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ, আর এন্ডোমেট্রিওসিস বহু নারীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা ও বন্ধ্যাত্বের উৎস। তেমনিভাবে, মেনোপজের মতো স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় অবস্থা অনেক সময় চিকিৎসা ও মনোসংযোগের অভাবে মানসিক এবং শারীরিক দুর্ভোগে পরিণত হয়।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই বিপুল অর্থায়ন শুধু গবেষণার গতিকে ত্বরান্বিত করবে না, বরং নারীস্বাস্থ্য নিয়ে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে। এ ধরণের উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য একটি বৈশ্বিক মডেল হিসেবেও কাজ করতে পারে, যেখানে লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবধান দূর করার প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।