
শ্রাবণের শেষ সময় এসেও বর্ষার প্রবল বৃষ্টি থামছে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবিরাম বৃষ্টি ও অতিরিক্ত সেচের ফলে শাক-সবজি সহ অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কাঁচা বাজারে, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই পরিস্থিতি ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে।রাজধানী ঢাকার মাটিকাটা এলাকার কাঁচা বাজার পরিদর্শন করলে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের দাম সর্বোচ্চ। বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২১০০ টাকায়, মাঝারি সাইজের দাম শুরু ১২০০ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকায় বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধি করছেন।
মুরগির বাজারেও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি দাম ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, আর দেশি মুরগি কেজি প্রতি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংসের দিক থেকে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে।
প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিমের দামও বেড়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়, আর ডজনের দাম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো মসলার এবং তেলের দামের বৃদ্ধি। সয়াবিন তেল (লুজ) বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৭২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬২ টাকা। পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দাম যথাক্রমে ১০ ও ১১ টাকা বেড়েছে। খোলা ময়দার দাম বেড়ে এখন হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
মসলার বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৮৫ টাকা কেজি, যেখানে গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, আমদানি করা রসুন ২২০ টাকায়। আমদানিকৃত আদার দাম ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এলাচের দাম সর্বোচ্চ ৫২০০ টাকা কেজি।সর্বত্র দাম বেড়ে গেলেও আলুর দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে আলু কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। দেশি রসুনের দামেও সামান্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে ময়দা (খোলা), সয়াবিন তেল (লুজ), পাম অয়েল, সুপার পাম অয়েল, মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, দেশি পেঁয়াজ, আমদানিকৃত রসুন, আমদানিকৃত আদা, এলাচ এবং ডিমের দাম বেড়েছে। আলু ও দেশি রসুনের দাম কিছুটা কমেছে।
বৈরিত আবহাওয়া এবং শাক-সবজির উৎপাদনে অনিশ্চয়তার কারণে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষের জীবিকা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নিত্যপণ্যের এই উর্ধ্বগতি বিশেষভাবে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।মূলত বৃষ্টিপাতের কারণে শাক-সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারের মূল্যবৃদ্ধিতে। সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। খাদ্যের পাশাপাশি মসলা ও রান্নার তেলের মূল্যবৃদ্ধিও তাদের অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন কৃষিপণ্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা ও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।