১০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াত-এনসিপির শর্তে বিএনপি, ভোটে নতুন সংশয়

ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে আন্দোলনের হুমকি: জামায়াত ও এনসিপি শর্ত নিয়ে মাঠে

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একাধিক শর্ত সামনে রেখে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতি যেন নতুন সংকটের মুখোমুখি, যেখানে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ, সংবিধান সংস্কার, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমান সুযোগের প্রশ্নগুলো ঘিরে আলোচনার এবং বিভেদের ঝড় বইছে।

অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ, সংশয় ও প্রশ্ন কমেনি। বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি মনে করছেন, সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে একটি “সাজানো” নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। তারা বলছেন, জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

শর্ত ও দাবির পেছনের কারণ

জামায়াত ও এনসিপির প্রধান দাবিগুলো হলো:

সংবিধান ও জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন করা।

ভোটের পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রতিনিধি অনুপাত (PR) পদ্ধতি চালু করা।

নির্বাচনের আগে সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শর্তগুলো তুলতে তারা মূলত নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব ও অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এনসিপির ক্ষেত্রে, ভোটের রাজনীতিতে এখনও কোনো আসনে এককভাবে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে দলটি নির্বাচনের আগে চাপ সৃষ্টি করে সরকারের ও বিএনপির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

জামায়াতও নির্বাচন নিয়ে কিছুটা চাপ অনুভব করছে। দলটির সংগঠিত শক্তি আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন নেই। তাই তারা চাইছে, নির্বাচন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে হোক এবং সব দল সমান সুযোগে অংশগ্রহণ করতে পারুক।

বিএনপির পরিস্থিতি ও চাপ

বিএনপির অবস্থান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুলনামূলকভাবে শক্ত। তারা ভোটের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু জামায়াত ও এনসিপির শর্ত ভিত্তিক আন্দোলন তাদের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে। যদি এই দুই দল ভোটে অংশ না নেয় বা আন্দোলনে নামার হুমকি দেয়, তাহলে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক নয় এবং বিএনপি নির্বাচনে একার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় মূলত সেই দলগুলোর ওপর পড়বে যারা শর্ত ভিত্তিক অবস্থান নিয়েছে।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিভেদ

ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য, শর্ত ও দাবির কারণে বিভাজন আরও প্রকট হয়েছে। জামায়াত ও এনসিপি মনে করছেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতি তাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য দলগুলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নেই, যা দল দুটির ক্ষোভের কারণ।

দুই দলই বলছে, যদি তাদের দাবি পূরণ না হয়, তারা রাজপথে সমাবেশ, বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচি নিতে পারে। এমনকি ভোট বর্জনের মতো পদক্ষেপও তাদের ভেতরে আলোচিত।

বিএনপি যদিও এই সবকে মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখছে, কিন্তু পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই শর্ত ভিত্তিক অবস্থান নির্বাচনকে সংঘাতপূর্ণ ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি

সরকার এখনই নতুন আলোচনার পথে যাবে না বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন দলের সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ, তফসিল ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে পারে, তবে সংবিধান সংস্কার বা সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে নয়।

রাজনীতিবিদরা বলছেন, ভোটের আগে আন্দোলন কর্মসূচি বা দাবিদফা স্থাপন পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জামায়াত ও এনসিপি সরাসরি আপত্তি না করলেও, সংবিধান ও জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবি থেকে তারা সরবেন না।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্দেহ, সংশয় ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ, অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না হলে এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর

 

ট্যাগ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার : সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

জামায়াত-এনসিপির শর্তে বিএনপি, ভোটে নতুন সংশয়

প্রকাশিত হয়েছে: ১২:৫৬:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে আন্দোলনের হুমকি: জামায়াত ও এনসিপি শর্ত নিয়ে মাঠে

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একাধিক শর্ত সামনে রেখে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতি যেন নতুন সংকটের মুখোমুখি, যেখানে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ, সংবিধান সংস্কার, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমান সুযোগের প্রশ্নগুলো ঘিরে আলোচনার এবং বিভেদের ঝড় বইছে।

অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ, সংশয় ও প্রশ্ন কমেনি। বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি মনে করছেন, সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে একটি “সাজানো” নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। তারা বলছেন, জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

শর্ত ও দাবির পেছনের কারণ

জামায়াত ও এনসিপির প্রধান দাবিগুলো হলো:

সংবিধান ও জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন করা।

ভোটের পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রতিনিধি অনুপাত (PR) পদ্ধতি চালু করা।

নির্বাচনের আগে সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও পরিবেশ নিশ্চিত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শর্তগুলো তুলতে তারা মূলত নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব ও অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এনসিপির ক্ষেত্রে, ভোটের রাজনীতিতে এখনও কোনো আসনে এককভাবে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে দলটি নির্বাচনের আগে চাপ সৃষ্টি করে সরকারের ও বিএনপির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

জামায়াতও নির্বাচন নিয়ে কিছুটা চাপ অনুভব করছে। দলটির সংগঠিত শক্তি আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন নেই। তাই তারা চাইছে, নির্বাচন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে হোক এবং সব দল সমান সুযোগে অংশগ্রহণ করতে পারুক।

বিএনপির পরিস্থিতি ও চাপ

বিএনপির অবস্থান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুলনামূলকভাবে শক্ত। তারা ভোটের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু জামায়াত ও এনসিপির শর্ত ভিত্তিক আন্দোলন তাদের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে। যদি এই দুই দল ভোটে অংশ না নেয় বা আন্দোলনে নামার হুমকি দেয়, তাহলে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক নয় এবং বিএনপি নির্বাচনে একার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় মূলত সেই দলগুলোর ওপর পড়বে যারা শর্ত ভিত্তিক অবস্থান নিয়েছে।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিভেদ

ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য, শর্ত ও দাবির কারণে বিভাজন আরও প্রকট হয়েছে। জামায়াত ও এনসিপি মনে করছেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতি তাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য দলগুলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নেই, যা দল দুটির ক্ষোভের কারণ।

দুই দলই বলছে, যদি তাদের দাবি পূরণ না হয়, তারা রাজপথে সমাবেশ, বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচি নিতে পারে। এমনকি ভোট বর্জনের মতো পদক্ষেপও তাদের ভেতরে আলোচিত।

বিএনপি যদিও এই সবকে মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখছে, কিন্তু পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই শর্ত ভিত্তিক অবস্থান নির্বাচনকে সংঘাতপূর্ণ ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি

সরকার এখনই নতুন আলোচনার পথে যাবে না বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন দলের সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ, তফসিল ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে পারে, তবে সংবিধান সংস্কার বা সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে নয়।

রাজনীতিবিদরা বলছেন, ভোটের আগে আন্দোলন কর্মসূচি বা দাবিদফা স্থাপন পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জামায়াত ও এনসিপি সরাসরি আপত্তি না করলেও, সংবিধান ও জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবি থেকে তারা সরবেন না।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্দেহ, সংশয় ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ, অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না হলে এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর