১০:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভাব জয় করে ফরিদপুরে পুলিশের চাকরি পেলেন ২৩ তরুণ-তরুণী

ফরিদপুর জেলায় পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এবার চাকরি পেয়েছেন ২৩ জন তরুণ-তরুণী। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যাদের সঙ্গী ছিল অভাব আর সংগ্রাম, তারাই এবার পৌঁছেছেন স্বপ্নের নতুন দিগন্তে। শ্রমিকের সন্তান, কারও বাবা ট্রাক কিংবা মাহেন্দ্র চালক—সংসারের টানাপোড়েন যেন নিত্যদিনের বিষয় ছিল সবার জীবনে। তবুও হাল না ছেড়ে কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য মনোবল দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, স্বপ্নে বিশ্বাস থাকলে তা একদিন সত্যিই পূরণ হয়।

নতুন নিয়োগ পাওয়া তরুণদের একজন সিয়াম মোল্লা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তার ভালো জামা ছিল না। বন্ধুর কাছ থেকে জামা ধার করে তিনি পরীক্ষার হলে গিয়েছিলেন। সেদিন চোখ ভরা ছিল অগণিত স্বপ্নে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে পুলিশের চাকরি পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের ছেলে সিয়াম বর্তমানে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শ্রমিক বাবার সঙ্গে কাজ করে পড়াশোনা চালানো এই তরুণ বলেন, ছোটবেলা থেকে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছি। আজ আমার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হলো।

এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন একমাত্র নারী প্রার্থী তন্দ্রা আক্তার। বয়স মাত্র ১৮ বছর। তার বাবা মাহেন্দ্রচালক তোরাব বিশ্বাস। সংসারের অভাব-অনটন তাকে কখনো থামাতে পারেনি। সরকারি চাকরি পাওয়া তার কাছে ছিল প্রায় অসম্ভবের মতো। কিন্তু দৃঢ় সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস তাকে পৌঁছে দিয়েছে লক্ষ্যস্থলে। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর তিনি বলেন, এই নিয়োগ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়েই আমি খুঁজে পেয়েছি জীবনের সার্থকতা।

একই রকম গল্প তামীম মন্ডলেরও। তার বাবা ট্রাকচালক সুমন মন্ডল। নিয়োগ পাওয়ার পর আবেগ সামলাতে পারেননি তামীম। আনন্দে ভেসে তিনি জানান, মাত্র ২২০ টাকার ব্যাংক ফি দিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা পূরণ হলো। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন পুলিশ সদস্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। কারও মুখে হাসি, কারও চোখে জল। কেউবা উচ্ছ্বসিত হয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরছেন, কেউ আবার ভবিষ্যতের স্বপ্নে ডুবে ভাবনায় মগ্ন। সবার গল্প যেন এক সুরে বাঁধা—অভাবের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধ জয় করে নতুন জীবনের পথে হাঁটা।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলেন ১ হাজার ২১১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪৩ জন। তাদের মধ্য থেকে ২৮ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় ২৩ জনকে।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, এ নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। আমরা কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করিনি। প্রত্যেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নির্বাচিত হয়েছে। পুলিশের নিয়োগকে ঘিরে নানা সময়ে অভিযোগ উঠলেও এবারের প্রক্রিয়ায় তার কোনো সুযোগ ছিল না। অসহায়-দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের চাকরি দিতে পারা আমাদের জন্যও এক বিশেষ আনন্দের বিষয়।

ট্যাগ

অভাব জয় করে ফরিদপুরে পুলিশের চাকরি পেলেন ২৩ তরুণ-তরুণী

প্রকাশিত হয়েছে: ১২:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুর জেলায় পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এবার চাকরি পেয়েছেন ২৩ জন তরুণ-তরুণী। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যাদের সঙ্গী ছিল অভাব আর সংগ্রাম, তারাই এবার পৌঁছেছেন স্বপ্নের নতুন দিগন্তে। শ্রমিকের সন্তান, কারও বাবা ট্রাক কিংবা মাহেন্দ্র চালক—সংসারের টানাপোড়েন যেন নিত্যদিনের বিষয় ছিল সবার জীবনে। তবুও হাল না ছেড়ে কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য মনোবল দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, স্বপ্নে বিশ্বাস থাকলে তা একদিন সত্যিই পূরণ হয়।

নতুন নিয়োগ পাওয়া তরুণদের একজন সিয়াম মোল্লা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তার ভালো জামা ছিল না। বন্ধুর কাছ থেকে জামা ধার করে তিনি পরীক্ষার হলে গিয়েছিলেন। সেদিন চোখ ভরা ছিল অগণিত স্বপ্নে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে পুলিশের চাকরি পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের ছেলে সিয়াম বর্তমানে রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শ্রমিক বাবার সঙ্গে কাজ করে পড়াশোনা চালানো এই তরুণ বলেন, ছোটবেলা থেকে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছি। আজ আমার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হলো।

এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন একমাত্র নারী প্রার্থী তন্দ্রা আক্তার। বয়স মাত্র ১৮ বছর। তার বাবা মাহেন্দ্রচালক তোরাব বিশ্বাস। সংসারের অভাব-অনটন তাকে কখনো থামাতে পারেনি। সরকারি চাকরি পাওয়া তার কাছে ছিল প্রায় অসম্ভবের মতো। কিন্তু দৃঢ় সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস তাকে পৌঁছে দিয়েছে লক্ষ্যস্থলে। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর তিনি বলেন, এই নিয়োগ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়েই আমি খুঁজে পেয়েছি জীবনের সার্থকতা।

একই রকম গল্প তামীম মন্ডলেরও। তার বাবা ট্রাকচালক সুমন মন্ডল। নিয়োগ পাওয়ার পর আবেগ সামলাতে পারেননি তামীম। আনন্দে ভেসে তিনি জানান, মাত্র ২২০ টাকার ব্যাংক ফি দিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা পূরণ হলো। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন পুলিশ সদস্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। কারও মুখে হাসি, কারও চোখে জল। কেউবা উচ্ছ্বসিত হয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরছেন, কেউ আবার ভবিষ্যতের স্বপ্নে ডুবে ভাবনায় মগ্ন। সবার গল্প যেন এক সুরে বাঁধা—অভাবের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধ জয় করে নতুন জীবনের পথে হাঁটা।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলেন ১ হাজার ২১১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪৩ জন। তাদের মধ্য থেকে ২৮ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় ২৩ জনকে।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, এ নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। আমরা কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করিনি। প্রত্যেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নির্বাচিত হয়েছে। পুলিশের নিয়োগকে ঘিরে নানা সময়ে অভিযোগ উঠলেও এবারের প্রক্রিয়ায় তার কোনো সুযোগ ছিল না। অসহায়-দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের চাকরি দিতে পারা আমাদের জন্যও এক বিশেষ আনন্দের বিষয়।