০৪:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলুমের পরিণতি: দুনিয়ার ফিতনা, আখিরাতের অন্ধকার

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি হলো ন্যায় ও সাম্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে যদি সত্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা না হয়, তবে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিকতা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ন্যায়বিচারকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সমাজে ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বহু আয়াতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ﴾—“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ দেন ন্যায়বিচার, সদাচার এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার জন্য।” (সূরা আন-নাহল: ৯০) এই আয়াত ইসলামী সমাজব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ন্যায়বিচারকে সর্বপ্রথমে উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে, একটি সমাজ টিকে থাকার প্রধান শর্তই হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা।

অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, ﴿وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ﴾—“তোমরা ওজন করো ন্যায়ের সঙ্গে এবং মাপে কম দিও না।” (সূরা আর-রহমান: ৯) এই আয়াত শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নয়, বরং প্রতিটি বিচার, প্রতিটি সম্পর্ক ও প্রতিটি সামাজিক লেনদেনে ন্যায়ের গুরুত্ব নির্দেশ করে।

ইসলামে ন্যায়বিচার এমন এক নৈতিক আদর্শ, যা শত্রুর প্রতিও সমভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ﴾—“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে ন্যায়ের বিপরীত আচরণে প্ররোচিত না করে। ন্যায়বিচার করো। এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি।” (সূরা মায়িদাহ: ৮) এ আয়াত শেখায় যে, ব্যক্তিগত রাগ-ঘৃণাও যেন আমাদেরকে ন্যায়ের পথ থেকে সরিয়ে না দেয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন মানবজাতির সর্বোচ্চ ন্যায়পরায়ণ নেতা। তিনি বলেছেন, “ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর নিকট নূরের মিনারে থাকবে… তারা হলো তারা, যারা শাসনে, পরিবারে ও কর্তৃত্বে ন্যায়বিচার করে।” (মুসলিম: ১৮২৭) এ থেকে বোঝা যায়, ন্যায়বিচার শুধু শাসকের দায়িত্ব নয়; বরং যার উপর কোনো দায়িত্ব বর্তায়, তার জন্যও এটি ফরয।

পক্ষপাতিত্বের বিপক্ষে রাসূল ﷺ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাহ-ও চুরি করত, তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম।” (বুখারি: ৬৭৮৮) এই দৃঢ় ঘোষণা প্রমাণ করে যে, ইসলামে ন্যায়বিচার আত্মীয়তা, জনপ্রিয়তা বা সামাজিক মর্যাদার প্রভাবে নষ্ট হয় না।

ন্যায়বিচার না থাকলে সমাজে জুলুম ও ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে। রাসূল ﷺ বলেছেন, “জুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।” (মুসলিম: ২৫৭৮) অর্থাৎ দুনিয়ায় অবিচার শুধু সমাজকেই ধ্বংস করে না; আখিরাতেও এটি অন্ধকার ও শাস্তির কারণ হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচার এমন এক চিরন্তন মূল্যবোধ, যা সব ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমভাবে প্রযোজ্য। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র—সর্বক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসলাম বাস্তবে কার্যকর হয় না। প্রকৃতপক্ষে, ‘আদল (العدل) ছাড়া ইসলাম পূর্ণ হয় না এবং জুলুম (الظلم) নিয়ে কেউ প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।’

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার তাওফিক দিন। আমীন।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জুলুমের পরিণতি: দুনিয়ার ফিতনা, আখিরাতের অন্ধকার

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:৫২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি হলো ন্যায় ও সাম্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে যদি সত্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা না হয়, তবে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিকতা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ন্যায়বিচারকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সমাজে ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বহু আয়াতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ﴿إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ﴾—“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ দেন ন্যায়বিচার, সদাচার এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার জন্য।” (সূরা আন-নাহল: ৯০) এই আয়াত ইসলামী সমাজব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে ন্যায়বিচারকে সর্বপ্রথমে উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে, একটি সমাজ টিকে থাকার প্রধান শর্তই হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা।

অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, ﴿وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ﴾—“তোমরা ওজন করো ন্যায়ের সঙ্গে এবং মাপে কম দিও না।” (সূরা আর-রহমান: ৯) এই আয়াত শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নয়, বরং প্রতিটি বিচার, প্রতিটি সম্পর্ক ও প্রতিটি সামাজিক লেনদেনে ন্যায়ের গুরুত্ব নির্দেশ করে।

ইসলামে ন্যায়বিচার এমন এক নৈতিক আদর্শ, যা শত্রুর প্রতিও সমভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ বলেন, ﴿وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ﴾—“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে ন্যায়ের বিপরীত আচরণে প্ররোচিত না করে। ন্যায়বিচার করো। এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি।” (সূরা মায়িদাহ: ৮) এ আয়াত শেখায় যে, ব্যক্তিগত রাগ-ঘৃণাও যেন আমাদেরকে ন্যায়ের পথ থেকে সরিয়ে না দেয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন মানবজাতির সর্বোচ্চ ন্যায়পরায়ণ নেতা। তিনি বলেছেন, “ন্যায়পরায়ণরা আল্লাহর নিকট নূরের মিনারে থাকবে… তারা হলো তারা, যারা শাসনে, পরিবারে ও কর্তৃত্বে ন্যায়বিচার করে।” (মুসলিম: ১৮২৭) এ থেকে বোঝা যায়, ন্যায়বিচার শুধু শাসকের দায়িত্ব নয়; বরং যার উপর কোনো দায়িত্ব বর্তায়, তার জন্যও এটি ফরয।

পক্ষপাতিত্বের বিপক্ষে রাসূল ﷺ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাহ-ও চুরি করত, তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম।” (বুখারি: ৬৭৮৮) এই দৃঢ় ঘোষণা প্রমাণ করে যে, ইসলামে ন্যায়বিচার আত্মীয়তা, জনপ্রিয়তা বা সামাজিক মর্যাদার প্রভাবে নষ্ট হয় না।

ন্যায়বিচার না থাকলে সমাজে জুলুম ও ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে। রাসূল ﷺ বলেছেন, “জুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।” (মুসলিম: ২৫৭৮) অর্থাৎ দুনিয়ায় অবিচার শুধু সমাজকেই ধ্বংস করে না; আখিরাতেও এটি অন্ধকার ও শাস্তির কারণ হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচার এমন এক চিরন্তন মূল্যবোধ, যা সব ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমভাবে প্রযোজ্য। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র—সর্বক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসলাম বাস্তবে কার্যকর হয় না। প্রকৃতপক্ষে, ‘আদল (العدل) ছাড়া ইসলাম পূর্ণ হয় না এবং জুলুম (الظلم) নিয়ে কেউ প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।’

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার তাওফিক দিন। আমীন।