০১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা: রাস্তার চতুর ঠকবাজী-সাহায্য করলে হতে পারেন শিকার

ঢাকা — রাজধানীর মানুষ যখন নির্বিঘ্নভাবে চলাচল করার চেষ্টা করেন, তখন কিছু নির্ধারিত এলাকায় বেআইনি চক্র ও প্রতারণার কৌশল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফার্মগেট, শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট—এসব বিখ্যাত জায়গায় সতর্কতামূলক বেশ কয়েকটি ঘটনা ও কৌশল সবার নজরে এসেছে; প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সচেতন রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা জারি করা জরুরি বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

ঘটনার সারমর্ম:

  • ফার্মগেট এলাকা ও অন্যান্য মোহরায় দেখা যায়—এক বা দু’জনকে আঘাত করে চিৎকার করতে বসে থাকে, বাই-স্ট্যান্ডাররা এগিয়ে এসে সাহায্য করতে গেলে দুর্বৃত্তরা সহায়তাকারীর কাছে থাকা টাকা, মোবাইল বা মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনা গঠনমূলকভাবে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারণা চক্রের কাজ বলে অভিযোগ।

  • ওভারব্রিজে বা রাস্তায় কাঁদতে থাকা বা সাহায্য চাইতে দেখা কোনো মানুষ যদি আপনার মোবাইল ব্যবহার করে কারো উপর মিসকল দেয়—তার মানে হতে পারে নম্বর সংগ্রহের ফাঁদ; পরে ওই নম্বরে কড়া টোন বা লোভনীয় প্রস্তাব পাঠিয়ে নামে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে।

  • শাহবাগ–মহাখালী–যাত্রাবাড়ীর যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় লিফলেট, ফাঁদী প্রস্তাব, বা ‘রুম ডেট’–ধাঁচের অফার দেখে সহজেই প্রলুব্ধ হলে ভুক্তভোগী বানানো হচ্ছে।

  • অনেকে ‘বোরকা-চোখের’ সৌন্দর্য দিয়ে বা হালকাভাবে ইশারা করে পথচারীদের ফাঁদে ফেলছে—চেনা-অচেনা সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে ব্ল্যাকমেইল বা অর্থ দাবি।

  • গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মাওয়া, আরিচা, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে তাস বা লুডু খেলিয়ে লোকবল যখন কাছে গেলে, অনেক সময় ছিনতাই বা জোরপূর্বক ঝুঁকি তৈরি হয়।

  • রেলগাড়ির ছাদে চলাচল করার সময় কিছু দল ছাদের উপর নেমে আসা যাত্রীদের লক্ষ্য করে ছিনতাই করে; ফলে ছাদে ওঠা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।

  • লঞ্চ বা স্পিডবোটে কম যাত্রী থাকলে উঠলে অনিশ্চিত ও ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার খবর রয়েছে—নির্জন স্থানে নৌকাটি ভিড়িয়ে ছিনতাই বা ছিনিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

  • সাধারণভাবে, সড়কে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা বা ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নেওয়া এ সময় অনুচিত; যাত্রাপথে যাওয়ার স্থান যেন পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা করেছেন।

নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা পরামর্শ (সংক্ষেপে):

  1. অচেনা গোষ্ঠী বা ভিড়ের মধ্যে জরুরি সঙ্কেত ছাড়া দৌড়ে ঢুকবেন না—পাশাপাশি ফোন ও মূল্যবান জিনিস সবসময় নিরাপদ স্থানে রাখুন।

  2. কেউ সাহায্য চাইলে, প্রথমে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পরিস্থিতি নজর করুন; সরাসরি হাতাহাতি বা ব্যস্ত রাস্তায় সশরীরে জড়াবেন না — প্রয়োজনে পুলিশ/নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে খবর দিন।

  3. অচেনা লোকের মোবাইল দিতে থেকে বিরত থাকুন; যদি ফোন দিয়ে কল করার অনুরোধ আসে, নিজে কল দেবেন না বা পরিচিত কারো মাধ্যমে যাচাই করে নেবেন।

  4. ভিড়–জ্যামে লিফলেট বা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না; কোনাে লোভনীয় প্রস্তাব পেলে ফোন নম্বর কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।

  5. রেল-ছাদে ওঠা, নির্জন স্পিডবোট-ভ্রমণ, কিংবা কম যাত্রী থাকা লঞ্চে ওঠা—এসব এড়িয়ে চলুন।

  6. হেঁটে যাওয়ার সময় বাসের মাঝখান দিয়ে দ্রুত উত্তরণের পরিবর্তে নিরাপদ সাইড ব্যবহার করুন; রাতের একক চলাচলে পরিচিতদের সঙ্গে থাকুন বা নিরাপদ রুট বেছে নিন।

  7. সড়কে কোন ঘটনার শিকার হলে দ্রুত ৯৯৯ / স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে জানান এবং সম্ভব হলে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বা সাক্ষীর ব্যবস্থা করুন।

নোট: সচেতনতা তৈরি করা জরুরি — পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সতর্কতাগুলো শেয়ার করে অধিক সংখ্যক মানুষকে বিপদ এড়াতে সাহায্য করুন। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে বিস্তৃত ক্যাম্পেইন করলে এসব চক্র চিহ্নিত ও দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: স্থানীয় পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে অবহিত করে দ্রুত টহল বাড়ানোর এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন এসেছে—সরকারি পক্ষের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এলে জনসাধারণকে জানানো হবে।

(সচেতন নাগরিকই সুরক্ষিত নগর গড়ে তুলতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন করুন।)

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা: রাস্তার চতুর ঠকবাজী-সাহায্য করলে হতে পারেন শিকার

প্রকাশিত হয়েছে: ০৫:০২:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা — রাজধানীর মানুষ যখন নির্বিঘ্নভাবে চলাচল করার চেষ্টা করেন, তখন কিছু নির্ধারিত এলাকায় বেআইনি চক্র ও প্রতারণার কৌশল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফার্মগেট, শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট—এসব বিখ্যাত জায়গায় সতর্কতামূলক বেশ কয়েকটি ঘটনা ও কৌশল সবার নজরে এসেছে; প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সচেতন রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা জারি করা জরুরি বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

ঘটনার সারমর্ম:

  • ফার্মগেট এলাকা ও অন্যান্য মোহরায় দেখা যায়—এক বা দু’জনকে আঘাত করে চিৎকার করতে বসে থাকে, বাই-স্ট্যান্ডাররা এগিয়ে এসে সাহায্য করতে গেলে দুর্বৃত্তরা সহায়তাকারীর কাছে থাকা টাকা, মোবাইল বা মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনা গঠনমূলকভাবে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারণা চক্রের কাজ বলে অভিযোগ।

  • ওভারব্রিজে বা রাস্তায় কাঁদতে থাকা বা সাহায্য চাইতে দেখা কোনো মানুষ যদি আপনার মোবাইল ব্যবহার করে কারো উপর মিসকল দেয়—তার মানে হতে পারে নম্বর সংগ্রহের ফাঁদ; পরে ওই নম্বরে কড়া টোন বা লোভনীয় প্রস্তাব পাঠিয়ে নামে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে।

  • শাহবাগ–মহাখালী–যাত্রাবাড়ীর যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় লিফলেট, ফাঁদী প্রস্তাব, বা ‘রুম ডেট’–ধাঁচের অফার দেখে সহজেই প্রলুব্ধ হলে ভুক্তভোগী বানানো হচ্ছে।

  • অনেকে ‘বোরকা-চোখের’ সৌন্দর্য দিয়ে বা হালকাভাবে ইশারা করে পথচারীদের ফাঁদে ফেলছে—চেনা-অচেনা সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে ব্ল্যাকমেইল বা অর্থ দাবি।

  • গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মাওয়া, আরিচা, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে তাস বা লুডু খেলিয়ে লোকবল যখন কাছে গেলে, অনেক সময় ছিনতাই বা জোরপূর্বক ঝুঁকি তৈরি হয়।

  • রেলগাড়ির ছাদে চলাচল করার সময় কিছু দল ছাদের উপর নেমে আসা যাত্রীদের লক্ষ্য করে ছিনতাই করে; ফলে ছাদে ওঠা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।

  • লঞ্চ বা স্পিডবোটে কম যাত্রী থাকলে উঠলে অনিশ্চিত ও ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার খবর রয়েছে—নির্জন স্থানে নৌকাটি ভিড়িয়ে ছিনতাই বা ছিনিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

  • সাধারণভাবে, সড়কে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা বা ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নেওয়া এ সময় অনুচিত; যাত্রাপথে যাওয়ার স্থান যেন পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা করেছেন।

নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা পরামর্শ (সংক্ষেপে):

  1. অচেনা গোষ্ঠী বা ভিড়ের মধ্যে জরুরি সঙ্কেত ছাড়া দৌড়ে ঢুকবেন না—পাশাপাশি ফোন ও মূল্যবান জিনিস সবসময় নিরাপদ স্থানে রাখুন।

  2. কেউ সাহায্য চাইলে, প্রথমে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পরিস্থিতি নজর করুন; সরাসরি হাতাহাতি বা ব্যস্ত রাস্তায় সশরীরে জড়াবেন না — প্রয়োজনে পুলিশ/নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে খবর দিন।

  3. অচেনা লোকের মোবাইল দিতে থেকে বিরত থাকুন; যদি ফোন দিয়ে কল করার অনুরোধ আসে, নিজে কল দেবেন না বা পরিচিত কারো মাধ্যমে যাচাই করে নেবেন।

  4. ভিড়–জ্যামে লিফলেট বা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না; কোনাে লোভনীয় প্রস্তাব পেলে ফোন নম্বর কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।

  5. রেল-ছাদে ওঠা, নির্জন স্পিডবোট-ভ্রমণ, কিংবা কম যাত্রী থাকা লঞ্চে ওঠা—এসব এড়িয়ে চলুন।

  6. হেঁটে যাওয়ার সময় বাসের মাঝখান দিয়ে দ্রুত উত্তরণের পরিবর্তে নিরাপদ সাইড ব্যবহার করুন; রাতের একক চলাচলে পরিচিতদের সঙ্গে থাকুন বা নিরাপদ রুট বেছে নিন।

  7. সড়কে কোন ঘটনার শিকার হলে দ্রুত ৯৯৯ / স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে জানান এবং সম্ভব হলে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বা সাক্ষীর ব্যবস্থা করুন।

নোট: সচেতনতা তৈরি করা জরুরি — পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সতর্কতাগুলো শেয়ার করে অধিক সংখ্যক মানুষকে বিপদ এড়াতে সাহায্য করুন। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে বিস্তৃত ক্যাম্পেইন করলে এসব চক্র চিহ্নিত ও দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: স্থানীয় পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে অবহিত করে দ্রুত টহল বাড়ানোর এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন এসেছে—সরকারি পক্ষের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এলে জনসাধারণকে জানানো হবে।

(সচেতন নাগরিকই সুরক্ষিত নগর গড়ে তুলতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন করুন।)