০৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিয়ামতের সূচনা হবে ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুঁৎকারে

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মহাপ্রলয় বা কিয়ামত সংঘটিত হবে ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙ্গা (সুর) ফুঁৎকারের মাধ্যমে। তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের জন্য সদা প্রস্তুত হয়ে তার শিঙ্গা মুখে নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।

পবিত্র কোরআনের একাধিক সূরায় কিয়ামত দিবসের ভয়াবহ চিত্র ও এর পরিণতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা কারিয়ায় এ দিনের বিভীষিকার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, মানুষ সেদিন বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মতো হবে এবং আতঙ্কে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আগুনে আত্মহুতি দেয়া পতঙ্গের মতো ছুটাছুটি করবে। পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে তুলোর মতো উড়ে বেড়াবে।

সুরা আয-যুমারের ৬৮-৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর জমিন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি জুলম করা হবে না।”

কিয়ামত সংঘটনের এই মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.)-এর উপর। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “ইসরাফিল (আ.) শিংগা মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, মাথা নত করে প্রভুর আদেশের অপেক্ষায় আছেন যে, কখন তাঁকে আদেশ করা হবে এবং তিনি ফুঁ মারবেন।” (তিরমিজি)।

বর্ণনা অনুযায়ী, কিয়ামত দু’টি ফুঁৎকারের মাধ্যমে সংঘটিত হবে:
১. প্রথম ফুঁৎকার (নাফখাতু উলা): এই ফুঁৎকারে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আসমান-জমিনের সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে এবং সমগ্র সৃষ্টিজগত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
২. দ্বিতীয় ফুঁৎকার (নাফখাতু সানি): এই ফুঁৎকারের মাধ্যমে সকল মানুষকে তাদের কবর থেকে পুনরুত্থিত করা হবে এবং হাশরের মাঠে সমবেত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে।

কিয়ামত পরবর্তী হাশরের মাঠে প্রতিটি মানুষের আমলনামা উপস্থাপন করা হবে এবং ন্যায়বিচার কার্যকর হবে। সুরা কারিয়ার আয়াত অনুযায়ী, যার নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে, সে লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন। আর যার পাল্লা হালকা হবে অর্থাৎ খারাপ কাজ বেশি হবে, তাকে জাহান্নামের দিকে নিক্ষেপ করা হবে।

সুরা ত্বহার ১০২ নং আয়াতে সেদিনের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “যেদিন সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে আর আমি অপরাধীদেরকে একত্রিত করব ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত, নীলচে (অন্ধ) দৃষ্টিহীন অবস্থায়।”

কোরআনের সুরা মুহাম্মদের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে বলেন, “তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?”

এই সকল বর্ণনা কিয়ামতের ভয়াবহতা ও নিশ্চিততা তুলে ধরে এবং মানুষকে দুনিয়ার জীবনেই সৎকর্ম করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

কিয়ামতের সূচনা হবে ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুঁৎকারে

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:০০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মহাপ্রলয় বা কিয়ামত সংঘটিত হবে ফেরেশতা হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙ্গা (সুর) ফুঁৎকারের মাধ্যমে। তিনি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের জন্য সদা প্রস্তুত হয়ে তার শিঙ্গা মুখে নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।

পবিত্র কোরআনের একাধিক সূরায় কিয়ামত দিবসের ভয়াবহ চিত্র ও এর পরিণতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা কারিয়ায় এ দিনের বিভীষিকার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, মানুষ সেদিন বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মতো হবে এবং আতঙ্কে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আগুনে আত্মহুতি দেয়া পতঙ্গের মতো ছুটাছুটি করবে। পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে তুলোর মতো উড়ে বেড়াবে।

সুরা আয-যুমারের ৬৮-৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর জমিন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি জুলম করা হবে না।”

কিয়ামত সংঘটনের এই মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.)-এর উপর। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “ইসরাফিল (আ.) শিংগা মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, মাথা নত করে প্রভুর আদেশের অপেক্ষায় আছেন যে, কখন তাঁকে আদেশ করা হবে এবং তিনি ফুঁ মারবেন।” (তিরমিজি)।

বর্ণনা অনুযায়ী, কিয়ামত দু’টি ফুঁৎকারের মাধ্যমে সংঘটিত হবে:
১. প্রথম ফুঁৎকার (নাফখাতু উলা): এই ফুঁৎকারে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আসমান-জমিনের সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে এবং সমগ্র সৃষ্টিজগত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
২. দ্বিতীয় ফুঁৎকার (নাফখাতু সানি): এই ফুঁৎকারের মাধ্যমে সকল মানুষকে তাদের কবর থেকে পুনরুত্থিত করা হবে এবং হাশরের মাঠে সমবেত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে।

কিয়ামত পরবর্তী হাশরের মাঠে প্রতিটি মানুষের আমলনামা উপস্থাপন করা হবে এবং ন্যায়বিচার কার্যকর হবে। সুরা কারিয়ার আয়াত অনুযায়ী, যার নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে, সে লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন। আর যার পাল্লা হালকা হবে অর্থাৎ খারাপ কাজ বেশি হবে, তাকে জাহান্নামের দিকে নিক্ষেপ করা হবে।

সুরা ত্বহার ১০২ নং আয়াতে সেদিনের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “যেদিন সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে আর আমি অপরাধীদেরকে একত্রিত করব ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত, নীলচে (অন্ধ) দৃষ্টিহীন অবস্থায়।”

কোরআনের সুরা মুহাম্মদের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে বলেন, “তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?”

এই সকল বর্ণনা কিয়ামতের ভয়াবহতা ও নিশ্চিততা তুলে ধরে এবং মানুষকে দুনিয়ার জীবনেই সৎকর্ম করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।