১০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রিনহাউস গ্যাস কমলেও ইউরোপের সামগ্রিক পরিবেশের অবস্থা ভালো নয়

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও পরিবেশ সংস্থা ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা (EEA) সতর্ক করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকলেও ইউরোপকে পরিবেশ রক্ষা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আরও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, “গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও বায়ুদূষণ কমাতে অগ্রগতি হলেও সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়।”

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে ২৭ সদস্যের ইইউ ২০৩৫ সালের নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় কমিশনের উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব—১৯৯০ সালের স্তর থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ নির্গমন কমানো—নিয়েও বিভাজন রয়ে গেছে।

EEA জানায়, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের কারণে ১৯৯০ সাল থেকে ইইউর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ইতোমধ্যেই ৩৭ শতাংশ কমেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু ইউরোপীয় সবুজ চুক্তির অধীনে গৃহীত নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আরও কার্যকর হতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাদেশের প্রকৃতি ভয়াবহ চাপের মুখে রয়েছে। সুরক্ষিত আবাসস্থলের ৮১ শতাংশ খারাপ অবস্থায়, ৬০-৭০ শতাংশ মাটি অবক্ষয়িত এবং ৬২ শতাংশ জলাশয়ের পরিবেশগত মান অপ্রতুল। পানির ঘাটতি ক্রমবর্ধমান সংকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তবে উন্নত শাসন, প্রযুক্তি, পুনঃব্যবহার ও জনসচেতনতার মাধ্যমে কৃষি, পানি সরবরাহ ও জ্বালানি খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পানি সাশ্রয় সম্ভব।

EEA আরও উল্লেখ করে, ইউরোপের অধিকাংশ ভবন তাপ সহ্য করার উপযোগী নয়, ফলে ১৯ শতাংশ ইউরোপীয় নাগরিক তাদের ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম নন। অথচ চরম তাপপ্রবাহের ঘটনা বাড়লেও ৩৮টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ২১টির স্বাস্থ্য পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত ঘটনায় (তাপপ্রবাহ, বন্যা, দাবানল, ভূমিধস) ইউরোপে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। অর্থনৈতিক ক্ষতিও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে—২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক ক্ষতি ২০১০-২০১৯ সালের তুলনায় ২.৫ গুণ বেশি। শুধু ২০২৩ সালেই স্লোভেনিয়ার বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দেশটির মোট জিডিপির ১৬ শতাংশের সমান ছিল।

ইইউর পরিবেশ সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পরোক্ষ প্রভাবও বাড়ছে—অবকাঠামো ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য হানি, খাদ্য ও পানির দামে অস্থিরতা তৈরি করছে। ফলে আগামীতে ইউরোপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে—পরিবেশ সুরক্ষা ও অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রে দ্বিগুণ প্রচেষ্টা নেওয়া।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

গ্রিনহাউস গ্যাস কমলেও ইউরোপের সামগ্রিক পরিবেশের অবস্থা ভালো নয়

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:১৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও পরিবেশ সংস্থা ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা (EEA) সতর্ক করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকলেও ইউরোপকে পরিবেশ রক্ষা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আরও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, “গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও বায়ুদূষণ কমাতে অগ্রগতি হলেও সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়।”

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে ২৭ সদস্যের ইইউ ২০৩৫ সালের নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় কমিশনের উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব—১৯৯০ সালের স্তর থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ নির্গমন কমানো—নিয়েও বিভাজন রয়ে গেছে।

EEA জানায়, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের কারণে ১৯৯০ সাল থেকে ইইউর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ইতোমধ্যেই ৩৭ শতাংশ কমেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু ইউরোপীয় সবুজ চুক্তির অধীনে গৃহীত নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আরও কার্যকর হতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাদেশের প্রকৃতি ভয়াবহ চাপের মুখে রয়েছে। সুরক্ষিত আবাসস্থলের ৮১ শতাংশ খারাপ অবস্থায়, ৬০-৭০ শতাংশ মাটি অবক্ষয়িত এবং ৬২ শতাংশ জলাশয়ের পরিবেশগত মান অপ্রতুল। পানির ঘাটতি ক্রমবর্ধমান সংকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তবে উন্নত শাসন, প্রযুক্তি, পুনঃব্যবহার ও জনসচেতনতার মাধ্যমে কৃষি, পানি সরবরাহ ও জ্বালানি খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পানি সাশ্রয় সম্ভব।

EEA আরও উল্লেখ করে, ইউরোপের অধিকাংশ ভবন তাপ সহ্য করার উপযোগী নয়, ফলে ১৯ শতাংশ ইউরোপীয় নাগরিক তাদের ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সক্ষম নন। অথচ চরম তাপপ্রবাহের ঘটনা বাড়লেও ৩৮টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ২১টির স্বাস্থ্য পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত ঘটনায় (তাপপ্রবাহ, বন্যা, দাবানল, ভূমিধস) ইউরোপে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। অর্থনৈতিক ক্ষতিও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে—২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক ক্ষতি ২০১০-২০১৯ সালের তুলনায় ২.৫ গুণ বেশি। শুধু ২০২৩ সালেই স্লোভেনিয়ার বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দেশটির মোট জিডিপির ১৬ শতাংশের সমান ছিল।

ইইউর পরিবেশ সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পরোক্ষ প্রভাবও বাড়ছে—অবকাঠামো ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য হানি, খাদ্য ও পানির দামে অস্থিরতা তৈরি করছে। ফলে আগামীতে ইউরোপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে—পরিবেশ সুরক্ষা ও অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রে দ্বিগুণ প্রচেষ্টা নেওয়া।