
আল-হাফিজ (الحفيظ) আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম, যার অর্থ হলো সংরক্ষণকারী ও রক্ষক। এটি এমন একটি গুণ, যা আল্লাহর অসীম ইলম, শক্তি ও হিফাযতের প্রকাশ ঘটায়। আল্লাহ শুধু তাঁর সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি, বরং তিনি প্রতিটি মুহূর্তে তাদের সংরক্ষণ করছেন, রক্ষা করছেন এবং সঠিক অবস্থায় স্থিত রাখছেন। এই নামটি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো কিছুই নেই।
আল-হাফিজ নামের মাধ্যমে প্রথমেই বোঝানো হয়, আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্টিকে সংরক্ষণ করেন এবং তাদের জীবনধারণের উপযোগী সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। আসমান-জমিন, দিন-রাতের পরিবর্তন, জীবজগতের খাদ্য, পানি, বায়ু—সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর এই হিফাযত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। কোনো প্রাণীর রিজিক, জীবন ও অস্তিত্ব তাঁর অনুমতি ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আল্লাহ সর্বদা সবকিছুকে তত্ত্বাবধান করছেন।
দ্বিতীয়ত, আল-হাফিজ নামের দ্বারা বোঝানো হয়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতিটি কর্মকে সংরক্ষণ করেন। বান্দার প্রতিটি কাজ—ভালো বা মন্দ, প্রকাশ্য বা গোপন—সব কিছুই তাঁর ইলমে বেষ্টিত এবং কিরামান কাতেবীন ফিরিশতাদের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ। বান্দার প্রতিটি আমল অক্ষরে অক্ষরে রেকর্ড হচ্ছে, এবং কিয়ামতের দিন এগুলোর হিসাব নেয়া হবে। তাই আল্লাহর এই নাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোনো কাজই গোপন নয়, সবকিছু সংরক্ষিত আছে।
আল-হাফিজ নামের আরেকটি বিশেষ অর্থ হলো রক্ষক। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিপদ, ধ্বংস, শয়তানের কুমন্ত্রণা ও গুনাহ থেকে হিফাযত করেন। তাঁর এই হিফাযত দুইভাবে প্রকাশিত হয়—সাধারণ এবং বিশেষ। সাধারণ হিফাযতে আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের রিজিক, স্বাস্থ্য, কাঠামো ও জীবনধারণের উপকরণ রক্ষা করেন। আবার বিশেষ হিফাযতে তিনি প্রিয় বান্দাদের ঈমানকে রক্ষা করেন, তাদের আমলকে শয়তান ও নফসের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখেন এবং তাদের হৃদয়ে দ্বীনের নূরকে অটুট রাখেন। এটি আল্লাহর এক বিশেষ রহমত, যা কেবল তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য নির্ধারিত।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ”
“নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সবকিছুর রক্ষক।” (সূরা হূদ, ১১:৫৭)
এই আয়াত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে, আসমান-জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুর রক্ষক আল্লাহ। তাঁর হিফাযত ছাড়া কোনো কিছু এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারে না।
আল-হাফিজ নাম আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি কাজ আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত হচ্ছে, কিছুই তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে না। একজন মুমিনের উচিত সর্বদা সচেতন থাকা, নিজের আমলকে সুন্দর রাখা, আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তাঁর হিফাযতের জন্য দোয়া করা। কেননা মানুষের প্রকৃত রক্ষক কেবল আল্লাহ, আর তিনিই একমাত্র যিনি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপদ রাখতে পারেন।