১২:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে মিসরে হামাস–ইসরায়েল আলোচনা শুরু

প্রায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে মিসরের পর্যটননগরী শারম আল-শেখে বসেছে হামাস ও ইসরায়েল–এর পরোক্ষ আলোচনার টেবিল। সোমবার (৬ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায়) এই আলোচনা শুরু হয়।

এই ঐতিহাসিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই পক্ষের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করছেন তিন দেশের কর্মকর্তারা। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন, যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, আলোচনার প্রথম দিনটি “ইতিবাচক পরিবেশে” শেষ হয়েছে এবং মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক শুরু হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, দুই পক্ষই কিছু শর্তে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে, যা সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন,  “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান দ্রুত যুদ্ধবিরতি হোক এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হোক। আলোচনাগুলো সেই দিকেই এগোচ্ছে।”

ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা প্রস্তাবের প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেছেন,  “আমি সবাইকে দ্রুত অগ্রসর হতে বলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তি সম্পন্ন হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং আলোচক স্টিভ উইটকফ।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন,   “বাস্তব প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নই দেখাবে হামাস সত্যিই সিরিয়াস কি না।”
তিনি ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন, আলোচনার সময় বিমান হামলা বন্ধ রাখতে।

ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আর হামাসের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া, যিনি রোববার মিশরে পৌঁছেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, হামাসের আলোচ্য তালিকায় রয়েছে গাজায় অবরোধ শিথিল, মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া এবং পুনর্গঠন তহবিলের নিশ্চয়তা।

আজ (৭ অক্টোবর) গাজা যুদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হলো। ২০২৩ সালের এই দিনে হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি হয়।
এরপর থেকে ইসরায়েল চালাচ্ছে ব্যাপক সামরিক অভিযান। গত দুই বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৮০ শতাংশ ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মানবিক পরিস্থিতি “চরম সংকটপূর্ণ” পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শারম আল-শেখের এই বৈঠক গাজা যুদ্ধের অবসানের দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।
যদি বন্দিবিনিময়ের প্রাথমিক ধাপে সাফল্য আসে, তবে পরবর্তী পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ও মানবিক পুনর্গঠনের রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

একজন মিসরীয় কূটনীতিক বলেন,   “সব পক্ষই বুঝতে পারছে, এখনই যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।”

 

ট্যাগ

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে মিসরে হামাস–ইসরায়েল আলোচনা শুরু

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে মিসরের পর্যটননগরী শারম আল-শেখে বসেছে হামাস ও ইসরায়েল–এর পরোক্ষ আলোচনার টেবিল। সোমবার (৬ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায়) এই আলোচনা শুরু হয়।

এই ঐতিহাসিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই পক্ষের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করছেন তিন দেশের কর্মকর্তারা। আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন, যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, আলোচনার প্রথম দিনটি “ইতিবাচক পরিবেশে” শেষ হয়েছে এবং মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক শুরু হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, দুই পক্ষই কিছু শর্তে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে, যা সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন,  “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান দ্রুত যুদ্ধবিরতি হোক এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হোক। আলোচনাগুলো সেই দিকেই এগোচ্ছে।”

ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা প্রস্তাবের প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেছেন,  “আমি সবাইকে দ্রুত অগ্রসর হতে বলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তি সম্পন্ন হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং আলোচক স্টিভ উইটকফ।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন,   “বাস্তব প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নই দেখাবে হামাস সত্যিই সিরিয়াস কি না।”
তিনি ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন, আলোচনার সময় বিমান হামলা বন্ধ রাখতে।

ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আর হামাসের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া, যিনি রোববার মিশরে পৌঁছেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, হামাসের আলোচ্য তালিকায় রয়েছে গাজায় অবরোধ শিথিল, মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া এবং পুনর্গঠন তহবিলের নিশ্চয়তা।

আজ (৭ অক্টোবর) গাজা যুদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হলো। ২০২৩ সালের এই দিনে হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি হয়।
এরপর থেকে ইসরায়েল চালাচ্ছে ব্যাপক সামরিক অভিযান। গত দুই বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৮০ শতাংশ ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মানবিক পরিস্থিতি “চরম সংকটপূর্ণ” পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শারম আল-শেখের এই বৈঠক গাজা যুদ্ধের অবসানের দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।
যদি বন্দিবিনিময়ের প্রাথমিক ধাপে সাফল্য আসে, তবে পরবর্তী পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ও মানবিক পুনর্গঠনের রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

একজন মিসরীয় কূটনীতিক বলেন,   “সব পক্ষই বুঝতে পারছে, এখনই যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।”