০৬:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করমুক্ত সীমা অপরিবর্তিত, বাড়লো করের চাপ—কে কতটা চাপে পড়বেন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকায় অনেকের প্রত্যাশা ভেঙেছে। আগের মতোই বার্ষিক ৩.৫ লাখ টাকা আয় পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে। যদিও ভবিষ্যতের জন্য সীমা বাড়ানোর আভাস দেওয়া হয়েছে, চলতি বছর সরাসরি করছাড়ের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ করদাতারা।

অন্যদিকে, করহার কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ করদাতার ওপর করের প্রকৃত চাপ বেড়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সাত ধাপের পরিবর্তে ছয় ধাপের নতুন করহারের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার ফলে আগের বছরের সমান আয় করেও এবার তুলনামূলকভাবে বেশি কর দিতে হবে।

করমুক্ত সীমা ও বিশেষ শ্রেণির করছাড়

করদাতার ধরন করমুক্ত আয়সীমা (২০২৫২৬)
সাধারণ ব্যক্তি ৩,৫০,০০০ টাকা
নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ৪,০০,০০০ টাকা
তৃতীয় লিঙ্গ ৪,৭৫,০০০ টাকা
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ৫,০০,০০০ টাকা
‘জুলাই যোদ্ধা’ (২০২৪ গণঅভ্যুত্থান) ৫,২৫,০০০ টাকা

 

করহার পরিবর্তনের ফল কী?

  • নতুন করধারায় সর্বোচ্চ করহার ৩০% অপরিবর্তিত, তবে আগের ধাপগুলোর সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে।
  • এতে করে তুলনামূলকভাবে মধ্যম আয়ের শ্রেণির করদাতাদের ওপর করের চাপ বেড়েছে।
  • নতুন ন্যূনতম কর: করযোগ্য আয়ের আওতায় আসা নতুন করদাতাকে ১,০০০ টাকা কর দিতে হবে। তবে পরের দুই বছরে করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলেই ৫,০০০ টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।

তুলনামূলক করদায়িত্ব (উদাহরণ):

আয় (টাকা) আগের কর (২০২৪-২৫) নতুন কর (২০২৫-২৬) পার্থক্য
৮,৫০,০০০ ১৭,৫০০ ~২২,৫০০ +৫,০০০
১৫,০০,০০০ ১,৩৫,০০০ ~১,৫০,০০০ +১৫,০০০

 

করমুক্ত সুবিধা যেসব খাতে:

  • জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়,
  • ইসলামিক জিরো কুপন ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট,
  • গুরুতর চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ (যেমন: ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট সার্জারি, কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপন) করমুক্ত রাখা হয়েছে।

 

অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন:

“সরকার করের আওতা বাড়াতে পারেনি, বরং একই সংখ্যক করদাতার ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। করসংস্কারের সুযোগ ছিল, কিন্তু পুরোনো কাঠামোই অনুসরণ করা হয়েছে।”

মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব

বাজেটে কর ও শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে একইসাথে মূল্যস্ফীতি ও করবৃদ্ধি—দু’দিকের চাপে পড়তে হতে পারে।
যেখানে জনগণের প্রত্যাশা ছিল করমুক্ত সীমা বাড়ানো হবে এবং কর কাঠামোতে স্বস্তি আসবে, সেখানে বাজেট বাস্তবতায় করদাতাদের জন্য চাপ আরও বাড়লো। আয় না বাড়লেও কর বাড়ছে—এটাই এখন অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মূল উদ্বেগ। বাজেটটি রাজনৈতিকভাবে অন্তর্বর্তী হলেও, এর চাপ কিন্তু সম্পূর্ণ বাস্তব।

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

করমুক্ত সীমা অপরিবর্তিত, বাড়লো করের চাপ—কে কতটা চাপে পড়বেন

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকায় অনেকের প্রত্যাশা ভেঙেছে। আগের মতোই বার্ষিক ৩.৫ লাখ টাকা আয় পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে। যদিও ভবিষ্যতের জন্য সীমা বাড়ানোর আভাস দেওয়া হয়েছে, চলতি বছর সরাসরি করছাড়ের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ করদাতারা।

অন্যদিকে, করহার কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ করদাতার ওপর করের প্রকৃত চাপ বেড়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সাত ধাপের পরিবর্তে ছয় ধাপের নতুন করহারের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার ফলে আগের বছরের সমান আয় করেও এবার তুলনামূলকভাবে বেশি কর দিতে হবে।

করমুক্ত সীমা ও বিশেষ শ্রেণির করছাড়

করদাতার ধরন করমুক্ত আয়সীমা (২০২৫২৬)
সাধারণ ব্যক্তি ৩,৫০,০০০ টাকা
নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ৪,০০,০০০ টাকা
তৃতীয় লিঙ্গ ৪,৭৫,০০০ টাকা
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ৫,০০,০০০ টাকা
‘জুলাই যোদ্ধা’ (২০২৪ গণঅভ্যুত্থান) ৫,২৫,০০০ টাকা

 

করহার পরিবর্তনের ফল কী?

  • নতুন করধারায় সর্বোচ্চ করহার ৩০% অপরিবর্তিত, তবে আগের ধাপগুলোর সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে।
  • এতে করে তুলনামূলকভাবে মধ্যম আয়ের শ্রেণির করদাতাদের ওপর করের চাপ বেড়েছে।
  • নতুন ন্যূনতম কর: করযোগ্য আয়ের আওতায় আসা নতুন করদাতাকে ১,০০০ টাকা কর দিতে হবে। তবে পরের দুই বছরে করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলেই ৫,০০০ টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।

তুলনামূলক করদায়িত্ব (উদাহরণ):

আয় (টাকা) আগের কর (২০২৪-২৫) নতুন কর (২০২৫-২৬) পার্থক্য
৮,৫০,০০০ ১৭,৫০০ ~২২,৫০০ +৫,০০০
১৫,০০,০০০ ১,৩৫,০০০ ~১,৫০,০০০ +১৫,০০০

 

করমুক্ত সুবিধা যেসব খাতে:

  • জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয়,
  • ইসলামিক জিরো কুপন ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট,
  • গুরুতর চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ (যেমন: ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট সার্জারি, কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপন) করমুক্ত রাখা হয়েছে।

 

অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেন:

“সরকার করের আওতা বাড়াতে পারেনি, বরং একই সংখ্যক করদাতার ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। করসংস্কারের সুযোগ ছিল, কিন্তু পুরোনো কাঠামোই অনুসরণ করা হয়েছে।”

মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব

বাজেটে কর ও শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে একইসাথে মূল্যস্ফীতি ও করবৃদ্ধি—দু’দিকের চাপে পড়তে হতে পারে।
যেখানে জনগণের প্রত্যাশা ছিল করমুক্ত সীমা বাড়ানো হবে এবং কর কাঠামোতে স্বস্তি আসবে, সেখানে বাজেট বাস্তবতায় করদাতাদের জন্য চাপ আরও বাড়লো। আয় না বাড়লেও কর বাড়ছে—এটাই এখন অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মূল উদ্বেগ। বাজেটটি রাজনৈতিকভাবে অন্তর্বর্তী হলেও, এর চাপ কিন্তু সম্পূর্ণ বাস্তব।